খাগড়াছড়ির পানছড়ির তেতুল যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম

0
271
বাড়িতে মহিলারা তেতুলের উপরের বাকল (চামড়া) ফেলে বাজারজাত করনের জন্য প্রস্তুত করছে। 

তৈরী হচ্ছে নতুন আয়ের ক্ষেত্র

মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান অলি, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি:

কয়েক বছর আগেও পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামে গাছে গাছে পঁচে যেত তেতুল। সেই তেতুল এখন নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে। তাও নেহাত কম দামে নয়। প্রতি কেজি তেতুল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। ইসলামপুর গ্রামে মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীদের কাছে গেলে এ চিত্র ফুঠে উঠে।

দুর্গম পাহাড়ী গ্রাম ধুদুকছড়া থেকে ২০ কেজি পাঁকা তেতুল বাজারে আনার পথে পানছড়ি বাজারের ১ কিলোমিটার আগেই ইসলামপুর রাস্তায় তেতুল বিক্রি করেন সুরবালা চাকমা। তিনি আলাপকালে বলেন, গত কয়েক বছর আগেও তেতুল গাছে গাছে পঁচে যেত। তখন কার তেতুল কে খায়? এখন সে তেতুল রীতিমতো বিক্রে হচ্ছে বাজারে ও রাস্তায়। প্রথম প্রথম আমি তেতুল বাজারে আনতে লজ্জা পেতাম।

তেতুল গাছটাকেও কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। গত পাঁচ-ছয় বছর আগে এক বাঙ্গালী আমার কাছে তেতুল খুঁজলে গাছের সকল তেতুল সস্তায় বিক্রি করে দেই। পরের বছর সে আগের তুলনায় বেশী দাম দেয় । এখন দেখি বাজারে তেতুলের ব্যাপক চাহিদা। এক সময়ের ফেলে দেওয়া ফল সড়ক যোগাযোগ ও ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ হওয়ায় আমরা কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছি। আগে ১টি তেতুল গাছ ছিলো ,এখন আমার পাচটি তেতুলগাছ আছে।প্রতি বছর আমি অনেকগুলো তেতুল পাই। আমাকে দেখে গ্রামের অনেক মানুষ তেতুল গাছ লাগিয়েছে। আর অনেকে বাগানও করবে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে তেতুল ক্রয় করতে এসেছে শাহিন মিয়া। তিনি একজন মৌসুমী ফল পাইকারী ক্রেতা । তার মতো আরো ৪-৫ জন মৌসুমী ফল ব্যাসসায়ী আছেন। গত দশ বছর ধরে তিনি মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীী। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলা হাট বাজার পানছড়ি,খাগড়াছড়ি, মাইসছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়ি ভাইবোনছড়া থেকে মৌসুমী ফল কিনে মাটিরাঙ্গা বাজারে পাইকারী বিক্রয় করেন। তেতুল মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২ টন কেজি তেতুল পাই। তা বিক্রি করে খরচ বাদে প্রতি সপ্তাহে আমার ১০-১২ হাজার টাকা আয় হয়। তাছাড়া আমার সাথে কয়েকজনের মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

পানছড়ির স্থানীয় মৌসুসী ফল পাইকারী ক্রেতা আব্দুস সামাদ, শাহিনুর মিয়া, মিজানুর রহমান জানায়, ৬-৭ বছর আগে তেতুলের চাহিদা ছিলো না। এখন চাহিদা থাকায় নতুন আয়ের ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। উপজেলার ধুদুকছড়া,তারাবন ছড়া,ত্রিপুরা টিলা, লোগাং, পুজগাং, কানুনগো পাড়ায় তেতুল গাছ বেশি। আমরা ব্যাপারিরা অনেক সময় আগাম গাছেই তেতুল কিনে রাখি। এছাড়াও লোগাং বাজার ,পানছড়ি বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহের হাটে তেতুল কিনে থাকি। গাছের আগাম কিনা তেতুল মাঘ-ফাল্গুন মাস থেকে পাঁকা শুরু হয় শেষ হয় চৈত্রে।

তেতুল পাঁকলে গাছ থেকে নামিয়ে বাড়িতে কাজের মহিলা দিয়ে উপরের বাকল (চামড়া) ফেলে দিই। পরে মাটিরাঙ্গা ও গুইমারার ব্যাপারিদের কাছে নিয়ে বিক্রয় করি।দুর্গম পাহাড়ী পাড়া থেকে প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকায় কিনে বিভিন্ন খরচ ও পরিবহনে কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা ব্যয় হয়। ঢাকা চট্টগ্রামের তেতুল ব্যাবসায়ীরা মাটিরাঙ্গা থেকে ৯৫-১০০ টাকা দরে কিনে নেয়। উনাদের কাছে ঢাকা, নারয়নগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসায়ীরা তেতুল ক্রয় করতে আসেন। তাদের কাছে প্রতি কেজি তেতুল ১০৫-১১০ টাকা দরে বিক্রি করে। সব মিলিয়ে প্রতি বছর পানছড়ি থেকে ৯০-১০০ টন তেতুল শহরের ব্যাপারীগন কিনে নেয়।

পানছড়ি উপজেলা উপ সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা অরুনাংকর চাকমা জানান, বাজারে তেতুল বিক্রি হওয়াই এখন অনেকে তেতুল গাছ লাগাচ্ছে। তেতুল গাছ লাগানোর পর তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। বড় তেতুল গাছ থেকে প্রতি বছর কয়েকশ মণ তেতুল পাওয়া যায়। আর পরিশ্রম একদম কম। তাই অনেকে তেতুল বাগান করার জন্য পরামর্শ চাইছেন। পানছড়ি কৃষি বিভাগ সব সময় বাগানীদের সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে।