মিজান হাওলাদার’র সিরিজ কবিতা।

0
165

শূন্যতা-১

 

|| 

শ্রাবণের ঘোর মধ্যরাতে —যেন অন্ধকার –

বেওয়ারিশ হাওয়ার অধীনে ভাসে  

আর আকাশ ভেজা রাতের গন্ধ উড়ে 

নামহীন ভাষার সুরে—

অনুকতো সুরে সুরে মুখরিত আমার ঘর!

যেন ভাঙা ঘরের ছায়ার উপর— নিচে হাওয়ায়  

বয়োবৃদ্ধ তোমার স্মৃতি উড়ে-

আকাশকুসুম অচেনা হাঁকপাঁকে

স্বপ্ন -দুঃস্বপ্নের বিষাদ মৈথুনে –

শ্রী-ঘুম ভেঙে গেল দুঃখ পোড়ানো শোকে!

 

এমনই রাতে হাওয়ার গায়ে ভেসে উড়ে যাচ্ছে হাওয়া 

আঁধার ঘনিয়ে আসছে সময়ের হাত ধরে-

চোখের জল ধুয়ে মুছে যাচ্ছে জলে –

তোমার কথার,শেষ কথা শুধু ঝুলে আছে-

অন্ধকার পড়ুয়া কবির মগজ জুড়ে! 

 

অথচ মিশকালো রাত আলিঙ্গন করে 

তুমি ঘুমিয়ে আছো অদ্ভুত সুখে –

মিসোলা, হৃদয়ের অতলান্তে কতটুকু তোমার আনাগোনা -তা সংখ্যাতীত মধ্যরাত জানে…

 

 

শূন্যতা-২

||

গভীরে রাত বাড়ছে নিজস্ব নিয়মে

দূরের একদলা অন্ধকার বুকের ভেতর —

দোল খায় দিক চিহ্নহীন অস্থিরতায়।

পাগলা বৃষ্টির দল—যেন আকাশের গাগরি বেয়ে,- 

কঠিন অভিমানের শামিয়ানা ভেদ করে – 

মাটির বুকে অস্থিত্ব ফেলে কাতরাচ্ছে! 

 

এমন রাত মিসকালো অপূর্ণতার তালা খুলে

আরো হতাশার সম্ভাবনার দিকে আমায় টানছে—

যেন আমার চোখেরজুত এলোমেলো অন্ধকারে সাঁতরাচ্ছে।

এমন একলা রাতে ভয় লাগে হাওয়ার গুঞ্জনে; টিপটিপ বৃষ্টির মলিন সুরে–

 

দৃষ্টির সুদূর পথে ভয়ংকর অন্ধকার তাঁবু ঘেঁষে –

নিয়ন বাতির কপাল জুড়ে—ভাসছে স্পষ্ট তোমার ছায়া চুম্বন আর চোখেমুখে ভাসছে হরেকরকম অন্তর জ্বালার বিজ্ঞাপন!

মনের সব কথার যৌথসভা—

যা অনেক আগে জলজ কল্পনায় মিলে গেছে দূরের– কোনও মায়ার -ছায়ায়। 

 

তবুও নিস্তব্ধ অন্ধকারে-

শুধু দূরের -কাছের হাওয়া ডাকপাখি উড়ে উড়ে বলে যৌথ কথার শেষ কথা—

তোমায় বড্ড মনে পড়ে “মিসোলা “মনে পড়ে____

 

 

শূন্যতা-৩

||

এমন আশ্চর্য দিনে -বিচ্ছিন্ন হ’য়ে পরে থাকা –

যেভাবে মেঘ;ক্রমেক্রমে ঝাপসা করে অবসরে__ 

লুকিয়ে নেয় আমাদের রোদমাখা পিতল দিন। 

 

সমস্ত দিন পাতাভেঁজা বৃষ্টির সুরে; আর দূরের হাওয়ায় ঝুলে ছিলো বেওয়ারিশ প্রেম আখ্যান-!

 

এমন দিনশেষে-দূরের কাছের যৌথ আলোচনা– 

দ্যাখো যুবতী সন্ধ্যার গতরে ডুবে নিরবে লুকায়-

আর আকাশের গাগরি থেকে কলাপাতার উপর জলের টুপুরটুপুর রাতের আত্মিক সুরের গুঞ্জনে-

-তোমায় বড্ড মনে পড়ে “মিসোলা” মনে পড়ে…

 

 

শূন্যতা -৪ 

||

অভিমানে তুমি ফিরিয়ে দিয়েছো কতকাল আগে?

আমার ফিরে আসা পথের সহজ ঠিকানা! 

অবহেলার আত্মরতিতে দেখেছো তুমি কতদূরে-?

এমন আষাঢ়ে ভাঙা ভাঙা শীতল সময়ের ব্যথা!

 

তবুও চোখের ভাঁজে তাকিয়ে দেখেছো কতক্ষণ

সেই জমে থাকা বৃষ্টির মদির জলের মতো ফাউন্ডেশন-

তবুও বলো নাই ফিরে এসো- 

বলো নাই থেমে গেছে যে কথা-

 

চোখের কোণে দেখিনি কখনো জল আমার উত্তরে–

শুধু মলিন হয়েছে প্রেম –

কঠিন হয়েছে ফিরে আসা 

ভুলতে গিয়ে তুমি যেন নামহীন ফুলের গন্ধের মতো উড়িয়ে দিয়েছো হাওয়ায় -কোনো পরিত্যক্ত খোলা মাঠে—আমার মমতা…

তবুও তোমায় বড্ড মনে পড়ে” মিসোলা” মনে পড়ে…

 

 

শূন্যতা -৫

||

যখন সূর্যের রঙ জং ধরে বাঁশপাতার ফাঁকে

বিলীয়মান আলো আর উত্তাপ দূরের-কাছের 

তখন বর্ষার আগমনী ঘোর আচ্ছন্ন বিকাল ভেবে-

তোমায় বড্ড মনে পড়ে-“মিসোলা” মনে পড়ে_

 

 

শূন্যতা-৬ 

||

এমনই দিন শেষে সমস্ত শুকনো পাতার শব্দ,

নির্জনে পায়ের তলে নতমুখী করে;

তুমি যেন বাগান বাড়ীর পাশের জঙ্গল ডিঙিয়ে ফিরছো—আরেকটি আপামর মৃত্যুর ফাঁদে।

ধীরে ধীরে অদূর প্রান্তের হাওয়ায়,হাওয়া চুমু খাচ্ছে। 

তোমার চোখেমুখে ভাসছে শুকনো পাতার ব্যথা…

 

এমনই দিন শেষে জটিল সঙ্কেত আর বিষন্ন মেঘেরডাকে; হালকা চমকে উঠছে আকাশ! 

ক্রমশ আলোক স্থিরচিত্র!

আর যেন সুনসান নীরবতায়__

স্বচ্ছ সুন্দর-মৃত্যু তোমার কপাল কাঁপিয়ে নাচছে!

 

অন্ধকার পথে তোমার জীবনের সব সুর- 

নিভৃতে আলো নিভে যাচ্ছে হাওয়ায়

চোখের গভীরে তাকিয়ে আছে মেঘাচ্ছন্ন দূরাগত শুভ দিন;

ছইলাগাঙের পাড়ে ঘোর আচ্ছন্ন রাত।

এমন রাত কী জানে মিসোলা? 

আমারও মৃত্যুর করুণ চিত্র ভাসে- 

তুমি হীন -বুকে শূন্যতায়।

২১.০৭.২০১৯