বটিয়াঘাটায় করোনাযোদ্ধা মানবিক চিকিৎসক ডাঃ মিজানুর রহমান

0
138

মোঃ একরামুল কবির, খুলনাঃ

বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্হ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা প্রজাতন্ত্রের একজন সফল মানব সেবায় নিয়োজিত -ডাঃ মিজানুর রহমান।

এই নামের শেষে হয়তবা এফ সি পি এস বা এম ডি / এম এস ডিগ্রী নেই কিন্তু বুকে আছে সাহস, মুখে আছে হাঁসি, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা।

২০১১ সালের ১৫ মে তারিখ সরকারী চাকুরীতে প্রবেশের পর ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেই অতি অল্প সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের হৃদয় মণিকোঠায় স্থান করে নেন তিনি। দীর্ঘ ৮ বছরের ও বেশী সময় তিনি ফুলতলা হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (হার্ট অ্যাটাক , স্ট্রোক , সিভিআর রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম) রোগী হাসপাতালে আসা মাত্রই রেফার করা হতো, সে সকল রোগীগুলো তিনি নিজ দায়ীত্বে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতেন । তাছাড়া সকাল-বিকাল এমনকি রাতে যখনি হোক রুগীর প্রয়োজনে ফোন করলেই ছুটে আসতেন হাসপাতালে। রোগিদেরকে নিজের মোবাইল নাম্বার দিতেন এবং ফলোআপ জানতেন।

তার মায়াবী ও দরদ মাখা হাসিতেই রোগী অর্ধেক সুস্থ হয়ে যেতেন। তার সেবায় ফুলতলা, অভয়নগর, ডুমুরিয়া ও দিঘলিয়া উপজেলার মানুষের প্রিয় ডাক্তার হয়ে যান অতি অল্প সময়ে মধ্যে। ধর্ম , বর্ণ, রাজনীতি মিলিয়ে নির্বিশেষে তিনি যেন সকলের আস্থার প্রতীক হয়ে যান। সরকারী চাকুরির নিয়ম অনুযায়ী বদলী হতে হয়।

গত বছরের ১লা ফেব্রুয়ারি তার বদলীর খবর পেয়ে হাজার হাজার মানুষ ফেস্টুন প্লাকরড হাতে ছুটে আসেন তার বদলী ঠেকাতে। এমনকি তারা খুলনা -৫ আসনের এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বরাবর বদলী বাতিলের আবেদন করেন এবং সব শেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে ও ডাঃ মিজানের আশ্বাসে (আবার ফিরে আসবেন ফুলতলায়) এমন প্রতিশ্রুতির কারণে জনতা হাসপাতাল ত্যাগ করেন। পরক্ষণে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেই নিজের ভাবমূর্তি প্রকাশ করতে থাকেন।

রোগি দেখা ও দাপ্তরিক কাজের মাধ্যমে এখানেও সকলের আস্থাভাজন হয়ে যান।করোনা মহামারী বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়লে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার করোনা হাসপাতাল চালু হলে পরিচালক ডাঃ মুন্সী মোঃ রেজা সেকেন্দার, ডাঃ মিজানুর রহমানকে ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের সহকারী কোঅরডিনেটর হিসেবে গুরু দায়িত্ব দেন, পাশাপাশি তিনি ২৫ শয্যার করোনা সাস্পেক্টেড ওয়ার্ড তথা ফ্লুকর্নার ও আইসোলেশন ওয়ার্ড এর ফোকাল পার্সন হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেন। করোনা মহামারি তে অন্য ডাক্তারের তুলনায় তিনিই রুগীর সংস্পর্শে বেশি যেতেন।

সরাসরি করোনা রুগির সেবা দানের পাশাপাশি তিনি সেবিকা ও অন্যান্য সাপোর্টিং স্টাফদের করোনা রুগী ম্যানেজমেন্ট এর উপর প্রশিক্ষণও দিতেন।

সরাসরি করোনা রুগীর সেবা প্রদান করতে গিয়ে তিনি ২৬/০৬/২০ তারিখ করোনায় আক্রান্ত হন এবং মাত্র ১১ দিনের মাথায় নিগেটিভ হয়ে ১২তম দিনে কর্মস্থলে যোগ দান করেন। এটা এক বিরল ইতিহাস ও বলা যায়। হাসপাতালের পরিচালক তাকে আবারো সেই গুরু দায়িত্ত্বে বহাল রাখেন।

দীর্ঘ ১৩ মাস খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারন রুগীর পাশাপাশি করোনা রুগিদের সেবা দানে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।সর্ব শেষ গত ৩১/০৩/২১ তারিখ বটিয়াঘাট স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা হিসেবে বদলীর আদেশ পান।

সুত্রে জানা গেছে, এবার তিনি স্বেচ্ছায় বদলী নেন কারণ তিনি ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য বিভাগের আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেতে চান। চলতি বছরের ১লা এপ্রিল তারিখ উপজেলা স্বাস্থ্য ওপঃ পঃ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এখানেও মানুষের সেবা কার্যক্রম থেমে নেই। জরাজীর্ণ হাসপাতালকে তিনি ঢেলে সাজাতে শুরু করেন।

যোগদানের পর তিনি হাসপাতালের উন্নয়নে এবং সেবার মান বাড়াতে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, জনপ্রতিনিধি ,সাংবাদিক ও প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় করেন। খুব দ্রুত তিনি হাসতালের সেবার মান বৃদ্ধি করেন, হাসপাতাল আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধন করেন।

মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সরকার প্রদত্ত সকল দায়িত্ব পালন করে চলেছে যার দৃষ্টান্ত কোভিড ভ্যাক্সিনেশন।

তার পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে ৫০ শয্যার হাসপাতালে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ১০ শয্যার কোভিড আইসোলেসন ওয়ার্ড চালু করেন। তাছাড়া করোনা আক্রান্ত রোগিদের সেবা প্রদান করেন।

ফুলমতি (৫৫), ইসমাইল (৬২), আয়শা (৫৮) ও মালতি দাশ নামের রোগীর, কাছে সেবার মান সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তারা বলেন,বর্তমান যে টি এইচ এ (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) সাহেব এসেছেন তিনি খুবই একজন ভাল ডাক্তার। তিনি আমাদের নিজে চিকিৎসা দেন এবং প্রতিদিন রাউন্ডে আসেন। এর আগে কোন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এভাবে রোগী দেখেনি। তার কার্যালয়ের সামনেও অনেক রোগির ভিড় দেখা যায়। বাসুদেব নামক এক রোগীকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনি কেন এখানে এসেছেন তিনি বললেন,আমার পাশের বাড়ির এক জটিল রোগী নারায়ণ ডাঃ মিজানকে দেখিয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন তাই আমিও তাকে দেখাতে এসেছি আর শুনেছি উনি রুগিদেরকে নিজের বাবা মায়ের মত যত্ন করে দেখেন।

সার্বিক বিষয় ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমি হলাম প্রজাতন্ত্রের চাকর। সকল রোগী দেখি আমার সন্তান মনে করে। আর মানুষের সেবা দেয়াই হলো আমার কাজ, এ কাজের মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য পেতে চাই।