নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গাহি সাম্যের গান মঞ্চে যাত্রা পালা “আপন ভাই” মঞ্চস্থ

0
387

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২২ মে রবিবার যাত্রা পালা ‘আপন ভাই’ মঞ্চায়িত হয়েছে।

আব্দুল আওয়াল সরকার রচিত ‘আপন ভাই’ যাত্রা পালাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের প্রযোজনায় ড. সৈয়দ মামুন রেজার নির্দেশনায় ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চের সামনে প্রদর্শিত হয়। যাত্রা পালাটিতে নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিনয় করেছেন।

এছাড়া প্রযোজনা সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন ঘটেছে। বাংলাদেশের লোকনাট্যের এক সময়ের জনপ্রিয় এই পরিবেশনাটি যে বাঙালির মননের সাথে মিশে আছে, তার প্রমাণ ‘আপন ভাই’ প্রদর্শনী কালে দর্শকদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ।

যাত্রা পালাটির নির্দেশক ড. সৈয়দ মামুন রেজা জানান, যাত্রা বাঙালির একান্ত নিজস্ব নাট্যসম্পদ। তবে দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, যাত্রার মতো এতো শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম ক্রমশঃ আবেদন হারাচ্ছে। এক সময় যাত্রাশিল্প বাংলাদেশের বৃহত্তর সমাজ তথা গ্রামবাংলার সর্বস্তরের মানুষের কাছে ছিল বিনোদন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার প্রধানতম শিল্পমাধ্যম। বাঙালির দেশপ্রেম, ইতিহাসের পাঠ, বিপ্লবী চেতনা, নৈতিক মূল্যবোধ এবং অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনা ধারণে যাত্রাশিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

তিনি আরও জানান, বাঙালি সংস্কৃতির নিজস্ব নাট্যসম্পদ হিসেবে যাত্রাশিল্পের সংরক্ষণ ও প্রসার ঘটানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

‘আপন ভাই’ যাত্রা পালার প্রদর্শনী দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, আমি এই প্রথম যাত্রা পালা দেখলাম। এক কথায় বলতে গেলে, কুশীলবদের অভিনয় দক্ষতা ও নির্দেশকের নান্দনিক ব্যবস্থাপনায় যাত্রা পালাটি আমাকে অভিভূত করেছে।

সত্যিকার অর্থেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যশিক্ষার নিয়ম ও সীমাবদ্ধ বাজেটের মধ্যে এ রকম সফল যাত্রা পালা মঞ্চায়নের জন্য নির্দেশক সাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন। এছাড়া যাত্রা পালার অভিনয়, পোশাক-সাজসজ্জার জন্য যে কোনো নাট্যসমালোচক প্রযোজনাটির ভূয়সী প্রশংসা করবেন।

অন্যদিকে যাত্রা পালাটির কাহিনিও খুবই চমৎকার। পালার কাহিনিতে দেখা যায়, ডা. সদরুল ও নসরুল দুই ভাই। ডা. সদরুল বিলেত থেকে ডাক্তারী পড়া শেষ করে নিজ গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার মহান পেশায় মনোনিবেশ করেন। তিনি রাজনীতি ও সমাজ সচেতন একজন ব্যক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। অন্যদিকে তাঁর ছোট ভাই নসরুল অর্থ-সম্পত্তির অপচয় ও আমোদ – ফূর্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। নসরুলের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা ডা. সদরুলসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া অনেককে ধরে নিয়ে নির্মম অত্যাচার করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যক্রম ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হবার লোভে নসরুল তার প্রেমিকাকেও পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয়।

ডা. সদরুল সুকৌশলে খান সেনাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে পূনরায় মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প দখল করে নেয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ডা. সদরুল জানতে পারেন তাঁর আপন ছোট ভাই নসরুল গোপনে পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষে কাজ করেছে। পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পনের পরমূহুর্তে জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে এবং প্রতিশোধ নিতে নসরুল তার বড় ভাই ডা. সদরুলকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

সর্বপরি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আপন ভাই’ যাত্রা পালার সফল মঞ্চায়ন বাংলাদেশের লোকনাট্য ঐতিহ্যের সমৃদ্ধির পরিচয় বহন করে।

এর মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ড. মো. কামাল উদ্দীন, পোশাক পরিকল্পনায় নুসরাত শারমিন এবং আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন মো. মেহেদী তানজির। এতে অভিনয় করেন ফয়সাল আহমেদ পিয়াস, মঈন খান বিল্লাহ্, সুমাইয়া আফরিন, কাজী আমির হামজা, এমে প্রু মারমা, শুভ্রদেব চক্রবর্তী, শুভ পাল, আফসানা খাতুন, ওয়াসিউ আল আজিজি, সাদমান সাকিব, সাদিয়া মেহজাবিন, সন্ধ্যা বেগম, সাকলাইন আরাফাত প্রমূখ।