গোপালগঞ্জে ড্রাগন ফল উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন নজরুল ইসলাম পান্নু

0
259
অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম পান্নু তার ড্রাগন ফল বাগানে দাড়িয়ে কথা বলছেন। ছবিঃ মিজানুর রহমান মানিক

গোপালগঞ্জ থেকে মিজানুর রহমান মানিক:

বহুমাত্রিক পুষ্টি ও আয়ুর্বেদিক গুণ সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল সাধারণত মরু অঞ্চলে ভালো জন্মে, কিন্তু বিল-বাওড়ের জেলা গোপালগঞ্জে ভিনদেশী ড্রাগন ফল উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন জেলার মুকসুদপুর উপজেলাধীন বাটিকামারীর আলোকিত মানুষ, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: নজরুল ইসলাম পান্নু।

বৃহস্পতিবার (১৫.০৪.২০২১) ড্রাগন ফল বাগানে বসে নজরুল ইসলাম পান্নুর সাথে কথা বলে জানা যায়, অধ্যাপনা পেশা থেকে অবসর গ্রহণের পরে নজরুল ইসলাম পান্নু তার দুই সহোদর কামরুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম রফিককে সাথে নিয়ে ব্যক্তিগত বিনিয়োগে নিজেদের জমিতে ড্রাগন চাষের কার্যক্রম শুরু করেন প্রায় ৭ মাস পূর্বে।

উদ্দেশ্য একটাই, এলাকার মানুষ সাশ্রয়ে দামী এই ড্রাগন ফল খেতে পারবে, এতে করে এলাকার পুষ্টি চাহিদা মিটবে, আবার দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার দুয়ার উম্মোচিত হবে।

নজরুল ইসলাম পান্নু এ প্রতিবেদককে জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রনালয়ের পরামর্শক, নাটোরের এসএম কামরুজ্জামানের পরামর্শক্রমে আমরা ১’শ ৫০ শতাংশ জায়গার উপরে ড্রাগন চাষ শুরু করি।

এ বাগানে মোট ৮৭৫টি পিলারে, প্রতি পিলারে ৪/৫টি ড্রাগন ফলের চারাগাছ রোপন করা হয়েছে, জমি প্রস্তুতকরণ, পিলার, রড ও টায়ার ক্রয়, লোকবল খরচ প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ মূল্য দাড়িয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা, প্রতিমাসে কেয়ারটেকারের বেতন সহ ঔষধ ও কীটনাশক বাবদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়াও বাগানের চতুর্পাশে লেটুস পাতা, রেড লেডি ও স্ট্রবেরীর চাষ করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, “ল্যাদা” নাম অত্যন্ত বিষাক্ত পোকার আক্রমনে ড্রাগন ফল গাছগুলো ঠিকমতো বাড়তে পারছেনা, আমরা প্রতিদিন সন্ধার পর থেকে রাত ১০/১১টা পর্যন্ত এই পোকা মারার কাজ করছি প্রতিনিয়ত, সন্ধার পর থেকে এই পোকার আক্রমনের তীব্রতা বেড়ে যায়।

এব্যাপারে আমরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে বারবার জানানোর পরেও তার কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক কোনো সাড়া আমরা পাইনি। এই ল্যাদা পোকার আক্রমন প্রতিহত করতে পারলে আগামি ৪/৫ মাসের মধ্যেই প্রতিটি গাছে ফল আসবে বলে আশা করছি।

নজরুল ইসলাম পান্নুর সহোদর রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, আমাদের এই ড্রাগন বাগানে জাত ভেদে হলুদ, সাদা, লাল, গোলাপী, কালো ও ছাইয়া কালো রঙের ড্রাগন ফলের গাছ রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন আসছেন, বাগান দেখছেন, উদ্বুদ্ধও হচ্ছেন এজাতীয় ফলের চাষ করতে।

মুকসুদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান বলেন, মুকসুদপুর কৃষি সেক্টরে চলমান যে লোকবল রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, সেজন্য কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে, এখন থেকে এই ড্রাগন বাগানকে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়মিত ফলোআপে রাখবো, ইতিমধ্যে আমি ও আমার দুই সহকর্মীকে সাথে নিয়ে ড্রাগন বাগানটি ভিজিট করেছি, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি, আশা করছি, এই পোকার আক্রমন আমরা প্রতিহত করতে পারবো।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবায়ের রহমান রাশেদ বলেন, সাধারণত: ড্রাগন চাষ হয় মরুভূমি অঞ্চলে, কিন্তু আমাদের দেশেও চাষীরা আস্তে আস্তে ড্রাগন চাষের দিকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, তারই ধারাবাহিকতায়, আমাদের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলাতে প্রথম বানিজ্যিকভাবে ১’শ ৫০ শতাংশ জায়গার উপরে ড্রাগনের চাষ করছে, জায়গাটা দেখেছি, সহজভাবেই চলছিলো সবকিছু, কিন্তু হুট করে একটা পোকা আক্রমন কওে বসে, এ পোকার আক্রমন ইতিপূর্বে পাওয়া যায়নি, কারন, ড্রাগনের চাষও আগে হয়নি।

এ ব্যাপারে লজিষ্টিক ও কারিগরি – সকল রকমের সহযোগিতা করার জন্য বাগানটিকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে নিয়মিত ফলোআপ রাখতে আমাদের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি।

বাটিকামারীর এই ড্রাগন বাগানের মালিক পক্ষের নিয়মিত পরিচর্যা এবং কৃষি সেক্টরের রুটিন মাফিক কারিগরি সহায়তা ও ফলোআপ নজরুল ইসলাম পান্নুর চ্যালেঞ্জকে সফলতার মুখ দেখাতে পারেেব, এমনটাই আশা করছেন এলাকার মানুষজন।