উদ্বোধন হলো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘মাস্ক বিতরণী হাব’

0
126

ডেইলিনিউসান ডেস্কঃ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের সচেতনতা বৃদ্ধি ও উৎসাহিত করতে জাতীয় পর্যায়ে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে তৈরিকৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘মাস্ক বিতরণী হাব’ এর উদ্বোধন করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই প্রোগ্রামের তৈরিকৃত অনলাইন ড্যাশবোর্ড ‘Mask Distribution Hub’ এর উদ্বোধন করেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ-এর সভাপতিত্বে আজ ২৩ মে, ২০২১ তারিখ অনলাইনে (জুম-এর মাধ্যমে) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জনাব জুয়েনা আজিজ ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব জনাব লোকমান হোসেন মিয়া।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার উৎসাহিত করার জন্য সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাস্ক বিতরণসহ বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে অনলাইন ড্যাশবোর্ড ‘মাস্ক বিতরণী হাব’ তৈরি করা হয়েছে। এ ড্যাশবোর্ডটির মাধ্যমে সারাদেশে মাস্ক বিতরণের সংখ্যা, মাস্ক বিতরণকারী সংস্থাসমূহের তথ্য, মাস্কের ধরন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মাস্ক ব্যবহারকারী জেলা ইত্যাদি তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি, বলেন, “ডাটা অ্যানালিটিক্স থেকে শুরু করে ই-ফাইল, সুরক্ষা ডট বিডি এমনকি আজকের ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘মাস্ক বিতরণী হাব’ আমাদের হোম-গ্রোন সলিউশন এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এজন্য আমাদেরকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কোনো অর্থ দিতে হয়নি বা পরামর্শকের সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। আমাদের নিজস্ব শ্রম ও মেধা দিয়েই বৈশ্বিক এ সংকটকে মোকাবেলার চেষ্টা করছি।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি ‘মাস্ক ডিস্ট্রিবিউশন হাব’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম যা ব্যবহার করে আমরা শহর, উপশহর, গ্রাম ও দুর্গম এলাকার প্রত্যেক জায়গাতে প্রয়োজন অনুপাতে মাস্ক সরবরাহ করতে পারব। ডাটা বিশ্লেষণ করে যেখানে সংক্রমণের হার বেড়ে যাচ্ছে সেখানে আগাম মাস্ক সরবরাহ করতে পারবো। সরকারের সক্ষমতার পাশাপাশি বেসরকারি সহায়তাগুলোকেও আমরা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল রক্ষায় মাস্ক ডিস্ট্রিবিউশন হাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আমাদের তৈরি করা পারসনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট আমাদের প্রতিবেশি দেশসহ ইউরোপ-আমেরিকাতেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দান করা হয়েছে উল্লেখ করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাস্কের প্রয়োজন ও বিতরণের ক্ষেত্রে আমাদের আত্ম-নির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা করা প্রয়োজন। মাস্ক উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ও সুলভমূল্যে মানুষের কাছে বিতরণ করতে পারলে এবং মানুষের কাছে মাস্ক পৌঁছে দিতে পারলে আমরা তাদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি করতে পারবো। সার্জিক্যাল বা এন৯৫ মাস্ক যাই হোক না কেনো বাংলাদেশেই মাস্ক তৈরি করে স্বল্পমূল্যে দিতে পারলে আরও ভালো হয়। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী মাস্ক উৎপাদন করে তা বিতরণের জন্য মাস্ক ডিস্ট্রিবিউশন হাব-এর মাধ্যমে এখন সুষ্ঠু সমন্বয় করতে পারবো।”

মাস্ক বিতরণের ডিজিটাল এ প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধনকালে মাস্কের বিতরণ ব্যবস্থায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা ও যারা বিভিন্নভাবে অনুদান হিসেবে মাস্ক দিচ্ছেন তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এ হাবের সাথে যুক্ত করার উপরও গুরুত্বারোপ করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) জনাব ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, বলেন, “মাস্ক বিতরণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমননি সব যায়গায় সমানভাবে মাস্ক পৌঁছানোও জরুরি। আমরা এমনও দেখেছি যেখানে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে সেখানে অনেক মাস্কই বিতরণ করা হচ্ছে আবার অনেক যায়গায় মাস্ক দরকার হলেও সেখানে বিতরণ করা হচ্ছে না। আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে বাস্তবে স্বাস্থ্য খাত অনেকখানি শক্তিশালী হয়েছে। আমাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সফলতার সবচেয়ে বড় জায়গা হচ্ছে সুরক্ষা। শুধু সুরক্ষা অ্যাপই নয়, করোনা ট্রেসার বিডিসহ আমাদের যত ধরনের ডাটা অ্যানালাইসিসের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে সেক্ষেত্রে আমরা আইসিটি ডিভিশনের অনেক সহায়তা পেয়েছি। এটুআই শুরু থেকেই আমাদের সাথে কাজ করছে এবং তাদের সাথে ডাটা অ্যানালাইসিসগুলো করে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নির্ধারণ করেছি। তাই সংক্রমণের হারের সাথে সমন্বয় রেখেই মাস্ক ডিস্টিবিউশনকে নিরীক্ষণ করতে হবে এবং একই সাথে এ প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রাপ্ত ডাটাগুলোকেও ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে হবে।”

এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী বলেন, “যতদিন পর্যন্ত আমরা সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে না পারছি ততদিন পর্যন্ত আমাদের মাস্ক পরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাস্ক ব্যবহার বৃদ্ধি করতে প্রধান দুটি পদক্ষেপের একটি হলো কমিউনিটির সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মাধ্যমে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন ও আরেকটি হলো মাস্ক বিতরণ। মানুষের কাছে যদি মাস্ক না থাকে তবে তারা মাস্ক কিনবেন না বা পরবেন না। মাস্ক ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য মাস্ক বিতরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও কারা মাস্ক বিতরণ করছে, কোথায় বেশি দেওয়া হচ্ছে, কোথায় কম দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা পুরো চিত্র জানতে পারছি না। মাস্ক বিতরণী হাব-এর মাধ্যমে আমরা এখন বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে খুব দ্রুত সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।”

সভাপতির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ বলেন, “যারা মাস্ক বিতরণ করবেন তাদের নাম ও তালিকা মাস্ক বিতরণী হাব-এ সংরক্ষিত থাকবে। যার ফলে বেসরকারি পর্যায়ে অনেকেই মাস্ক বিতরণে আগ্রহী হবেন এবং এ তথ্যগুলো আমাদের অনেক কাজে লাগবে। মাস্ক বিতরণী হাব-এর উদ্বোধনের মাধ্যমে আজ আমাদের জন্য নতুন একটা জগত উন্মোচিত হলো। আমরা এখন রিয়েলটাইম ডাটা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আজকে যে প্ল্যাটফর্মটি তৈরি হয়েছে অদূর ভবিষ্যতে আমরা এর সাথে অগ্রসরমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাস্ক বিতরণের পরে কে মাস্ক ব্যবহার করছে এবং কে করছে না তাও আমরা নিশ্চিত করতে পরবো।”

এ অনলাইন সভার সঞ্চালনা করেন এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মোঃ ড. আব্দুল মান্নান, পিএএ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠপ্রশাসন অনুবিভাগ) জনাব শেখ রফিকুল ইসলাম পিএএ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) জনাব সৈয়দ মুজিবুল হক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) জনাব ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এছাড়া সভার শুরুতে মাস্ক বিতরণী হাব কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে একটি অনলাইন প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই এর চিফ টেকনোলজি অফিসার মোহাম্মদ আরফি এলাহী।

এ সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, বিভিন্ন এনজিও, আইএনজিও, গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিগণ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিগণ অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।