সুসজ্জিত পায়রা সেতু ২৪ অক্টোবর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

5
153

বিলাস দাস,পটুয়াখালীঃ

কর্নফুলী সেতুর আদলে সজ্জিত হয়েছে গোটা দক্ষিনাঞ্চলের স্বপ্নের সারথি পায়রা সেতু। এখোন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এঁর শুভ উদ্বোধন (র্ভাচুয়াল) করবেন।

গত ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী একান্ত সহকারী সচিব-০১ ইসমাত মাহমুদা স্বাক্ষরিত পত্রে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে যেন উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। যে যার মত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা ছড়াচ্ছে।

শুধু উৎসবের আমেজ নয়, ঢাকা-কুয়াকাটা সড়ক পথের পটুয়াখালীর পায়রা নদীর ওপরে নির্মিত এই সেতু বন্ধনে নতুন ব্রান্ড তৈরী হবে দক্ষিনাঞ্চলে। যার সুফল ভোগ করবে গোটা দেশের মানুষ। পাশাপাশি সময় ও যানজটের সীমাহীন ভোগান্তি মিটিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে নির্বিঘেœ আরাম দায়ক ভ্রমনে মুল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। মোট কথা দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কুয়াকাটা পৌছাতে কোন যানজটের বিরম্বনা থাকছেনা।

পায়রা সেতু প্রকল্প সুত্র জানায়-এই সেতু র্নিমানে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সেতু র্নিমানে ৮২ শতাংশ অথ্যায়নে ছিল কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এ্যাপেক্স ফান্ড। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেঁতুর আদলেই এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল পদ্ধতিতে পায়রা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুতে থাকা ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্টের কারণে দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটি শূন্যে ভেসে আছে। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মাণে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বেশ কিছু পাইল। এসব পাইল পদ্মা সেতুতে বসানো পাইলের থেকেও অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন বলে জানায় প্রকল্প পরিচালক। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত।

সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন-‘সর্বোচ্চ জোয়ারেও নদীর উপরিভাগ থেকে ১৮.৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে এ সেতুটি। ৪ লেন বিশিষ্ট এই সেতুর উভয় পাশে নির্মিত হয়েছে ১ হাজার ২৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে অ্যাপ্রোচ সড়ক। আধুনিক ডিজাইনে স্থাপন করা হয়েছে আলোকসজ্জাও। শুধু সেতু‘ই নয়, সেতুর আলোতে ঝলমল করছে পায়রা নদী সংলগ্ন এলাকা। এছাড়া বাংলাদেশে এই প্রথম পায়রা সেতুতে বসানো হয়েছে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম। ভূমিকম্প, বজ্রপাত এবং ওভারলোডেড গাড়ির ক্ষেত্রে এই সিস্টেম দেবে আগাম সংকেত। ফলে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে সক্ষম হবে সেতুটি। তবে সেতু এলাকার দুই পাড়ে নদী শাসনের কিছু কাজ চলমান রয়েছে। এতে সেতু চালু নিয়ে কোনো বাধা নেই।

৩ দফা সময় বৃদ্ধি এবং নির্মাণে ৮ বছর সময় লাগার কারণ প্রসঙ্গে প্রকৌশলী আরও বলেন- ‘প্রথমত, অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ প্রশ্নে জমি অধিগ্রহণের নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। নদী শাসনের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু জটিলতা ছিল। এখানে জয়েন্ট ভেঞ্চারে সেতু নির্মাণ প্রশ্নে লিডিং ঠিকাদার চীনের লো ঝিয়াং কোম্পানী। সেতুর অধিকাংশ মালামালও এসেছে চীন থেকে। করোনার কারণে এ প্রকল্পের কাজে পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি মালামাল আসায় জটিলতা না থাকলে আরও আগেই শেষ হতো সেতুর নির্মাণ। আমরা সব কাজ সম্পন্ন করেছি। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন। প্রকল্প শেষ করে প্রস্তবনা পাঠানোর পরে ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে সেতুর টোল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা। সেতুতে যানবাহন পারাপারে যে টোল র্নিধারন করা হয়েছে তা ফেরীর তুলনায় কয়েকগুন বেশি বলে দাবি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে-যেখানে ফেরিতে যাত্রীবাহী বাস পার হতে দিতে হয় ৫০ টাকা সেখানে সেতুর টোল ধরা হয়েছে ৩৪০ টাকা। অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রেও একই হারে বাড়ানো হয়েছে টাকার অঙ্ক। পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সদস্য আলী হোসেন বলেন-‘২৫ আসনের একটি মিনিবাস বরিশাল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা পটুয়াখালী যেতে ভাড়া নেওয়া হয় মাথাপিছু ৮০ টাকা। এই পথে আরও দুটি সেতু রয়েছে। ওই দুই সেতুতে ৫০ টাকা করে টোল আদায় করা হয়। সঙ্গে রয়েছে কর্মচারী বেতন এবং জ্বালানি খরচ। পায়রা সেতুতে ৩৪০ টাকা টোল দিতে হলে লোকসানের মুখে পড়বেন বাস মালিকরা। তাই টোলের হার পুনর্র্নিধারণের দাবি জানাচ্ছি।’

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপত্বি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ কাজী আলমগীর বলেন-সেতু র্নিমান নিয়ে প্রোপাগান্ডার অবসান হলো।‘পায়রা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবৈক পরিবর্তন আসবে। বরিশাল থেকে মাত্র দুই-আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যাবে পায়রাবন্দর ও সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়। ফলে পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে আমি আশাকরি। এছাড়াও পটুয়াখালী জেলার পার্শ্ববর্তী জেলা গুলো যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। আর এর কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সেতু উদ্বোধনের ফলে প্রগতিশীল জেলায় রুপ নেবে পটুয়াখালীসহ গোটা দক্ষিনাঞ্চল।ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে যোগাযোগের দূরত্ব কমে যাওয়ার কারনে ব্যবসা-বাণিজ্যে বয়ে আনতে শ্রীসম্পন্নতা।

পটুয়াখালী-০৪ আসনের সাংসদ মুহিব্বুর রহমান মুহিব বলেন-পদ্মা সেতু পর পটুয়াখালীর পায়রা নদীর উপরে কর্নফুলীর সেতুর আদলে পায়রা সেতু র্নিমান করে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসিকতা ও প্রগতিশীলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সকল প্রোপাগান্ডার অবসান ঘটিয়ে ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নিজেই সেতু উদ্বোধন করবেন। দক্ষিনাঞ্চলে শুধূ পায়রা সেতু নয়,উন্নয়নের ভান্ডার প্রদান করেছেন। আমি ও আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই সাংসদ নেতা আরও বলেন-শুধূ দিন নয়, রাতবিরাত যেন কোন মানুষ যে কোন সময়ে র্নিবিঘেœ ও সাচ্ছন্দে কুয়াকাটায় পৌছাতে পারবে। সময়ের বিরম্বনার দিন গুলো এখোন স্মৃতি হয়ে থাকবে।

প্রসঙ্গত-কুয়াকাটা থেকে পটুয়াখালী পৌছাতে সনাতন পদ্ধতির তিন ফেরী পারাপার হতে হতো। আর পটুয়াখালী থেকে বরিশাল পৌছাতে একই ভাবে আরও তিনটি ফেরী পারাপার হতে হতো। মোট কথা কুয়াকাটা থেকে প্রায় ৮-৯ ঘন্টা সময় লেগে যেতো বরিশাল পৌছাতে। বর্তমান সরকারের আমলে এই ৬টি নদীর ৫টিতেই র্নিমিত হয়েছে সেতু। ২০১৩ সালের ১৯ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালী ফেরীঘাটের দক্ষিন পাশে এই সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই সেতুর কাজ শুরু করা হয়। নানা জটিলতা পেরিয়ে এখোন শুধু উদ্বোধনের প্রহর গুনছে “পায়রা সেতু”।