সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন চলতি সংসদ অধিবেশনে পাশের দাবি

0
100

চলতি সংসদ অধিবেশনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ করার দাবিতে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দিয়েছে সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী, বিড়ি শ্রমিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র (ডর্‌প) এর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই ২০২৩) চিঠিগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে উপসচিব জনাব মোহাম্মদ আবদুল হালিম এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে উপসচিব জনাব মুহাম্মদ শাহাদাত খন্দকার চিঠিগুলো গ্রহণ করেন।

এসময়ে ডর্‌প এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আজহার আলী তালুকদার এবং প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম।

উল্লেখ্য যে, বিগত দুই বছর যাবত বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে দাবি-দাওয়া করে আসছিলেন। অবশেষে, ২০২২ সালে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বিশ্বমানে উন্নীত করতে সংশোধনী প্রস্তাব প্রণয়ন করে। ১৬ জুন ২০২২ তারিখে সংশোধনী প্রস্তাব জনমত যাচাইয়ের জন্য জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে এবং সংশোধনীর পক্ষে ১৬০০০ জনেরও অধিক ইতিবাচক মতামত প্রদান করেন। মতামত প্রদানকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ১৬৯ জন সাংসদ। ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে চূড়ান্ত সংশোধনীটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রাথমিক যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রীপরিষদে প্রেরণ করা হয়। মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কর্তৃক যাচাইবাছাই পূর্বক খসড়াটি পাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। উক্ত চূড়ান্ত খসড়াটি দ্রুত পাশের দাবিতে বিভিন্ন তৃণমূল সংগঠন সোমবার চিঠিগুলো দুই মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ও সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অন্যতম ৬ টি ধারা হলো- সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক দ্রব্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা শলাকা বিক্রয় বন্ধ করা এবং বিড়ি ও সিগারেটের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা।

চিঠিগুলোর মূল বক্তব্যে আরও বলা হয়, “দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি (৩৫.৩%, গ্যাটস্ ২০১৭)। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের কারণে পরিবেশের ক্ষতিও ব্যাপক।

কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। পরোক্ষ ধূমপায়ীর হার ১৮%। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর হার ২০.৬%। তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসারসহ নানাবিধ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য (২০১৮) অনুযায়ী দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিদিন প্রায় ৪৪৪ জন মানুষ মারা যায়।”
এই ক্ষতি রোধে সর্বাধিক কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি চলতি সংসদ অধিবেশনে পাশ করা।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সাধারণ জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট তৃণমূল সংগঠনগুলোর সদস্যগণ চলতি সংসদ অধিবেশনে উক্ত খসড়া প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা ও আইনে পরিণত করার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতি জোর দাবি জানান।

ডর্‌প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় ডর্‌প বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।