রবিন জাকারিয়ার ছোট গল্প

0
230


কাপড়ে মোড়ানো নগ্ন দেবী
রবীন জাকারিয়া

সমন্বিত খামার করবো বলে আমি আর আমার এক বন্ধু উপশহরগুলোতে চাষাবাদী জমি খুঁজছি ৷ জমি কিনবো, খামার বানাবো ৷ কিন্ত উপযুক্ত জমি পাচ্ছিনা ৷ আবার পেলেও দামে কিংবা একসাথে এত জমি মিলছেনা ৷ এরই উদ্দেশ্যে বন্ধু তথা পার্টনারকে নিয়ে চিলমারীর চরগুলোতে খামারের দৃশ্যমানতা ও যৌক্তিকতা যাচাইয়ের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন চর যেমন অষ্টমির চর, মানুষ মারার চর, ঝুনকার চর, নাইয়ার চর ঘুরে অবশেষে সন্ধ্যার দিকে বন্ধু শাহীন রাত্রি যাপনের জন্য নিয়ে গেল নয়ারহাট চরে ৷ থাকার ব্যবস্থা হলো সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে ৷
খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা অন্যত্র ৷
এলাকায় আমার বন্ধুটির প্রচন্ড প্রভাব ৷ জোতদার বংশের ছেলে আর রাজনৈতিক প্রভাব দু’টো মিলে বলা যায় সে এলাকার হিরো ৷ আমাদের আগমনের কারণ শুনে সকলে সাধুবাদ জানাচ্ছে, কোন প্রকার সমস্যা হবে না ৷ হলেও তারা সহযোগিতা করবে বলে নিশ্চয়তা দিচ্ছে ৷

বেশীরভাগ এলাকাবাসী আমাদের কোটিপতি ব্যবসায়ী হিসেবে ধরে নিয়েছে ৷ তাই চলছে বাড়তি যত্ন ৷ কে রাতে, কে সকালে আর কে-ইবা দিনে খাওয়ার আয়োজন করবে তা নিয়ে চললো বিতর্ক৷ মানুষের এত গুরুত্ব বেশ উপভোগ করছি ৷ সারাদিন ট্রাভেল আর রাত অবধি আড্ডায় শরীর ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত ৷ তাই ডিনারটা শাহীনের বাসায় সেরে চেয়ারম্যানের বাড়িতে ঘুমোতে এলাম ৷ ক্লান্তি আর টিনের চালে বৃষ্টির মনোরম ছন্দে বিছানায় শুয়ে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়লাম ৷
পরদিন বেলা এগারোটা নাগাদ ঘুম ভেঙ্গে দেখি পাশে শাহীন নেই, একাকী শুয়ে আছি নির্জন একটি কক্ষে ৷ বৃষ্টি থেমে গেলেও চারিদিকে অন্ধকার ৷ সৌর বিদ্যূতের মিটমিটে আলো ৷ একটা ঘোর লাগা অনুভূতি ৷
হঠাৎ এক যুবা নারী হাতে টেবিল ফ্যান নিয়ে ঘরে ঢুকলো ৷ বিব্রতকর পরিস্থিতি ৷ তাড়াতাড়ি টি-শার্টটা গায়ে জড়িয়ে বিছানায় বসে পড়লাম ৷ দূরে প্লাস্টিকের একটি চেয়ারে অপরুপা বসলো ৷ ভেবে পাচ্ছিনা কীভাবে শুরু করবো? তারচেয়ে ওই শুরু করুক ভেবে চুপ রইলাম ৷ অপরুপা বললো, ও জয়িতা ৷ চেয়ারম্যানের মেয়ে ৷ কুড়িগ্রাম কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ৷ আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমটি আসলে তার পড়ার ঘর ৷ চারিদিকে বই ৷ পাঠ্য বই, গল্পের বই, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার গাইড, পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষার গাইড অন্যান্য ৷ গত রাতে ক্লান্তির কারনে দেখা হয়নি কিছুই ৷
আমিও একই সাবজেক্টের ছাত্র শুনে বেশ আগ্রহী হয়ে চেয়ারটা নিয়ে কাছে এসে বসলো ৷ বুকটা ধক্ করে উঠলো ৷ আচ্ছা আমার পা দু’টো কি কাঁপছে?
আমাদের খামারটাতে কী করতে চাই জানতে চাইলে বললাম ডেয়ারি, পৌল্ট্রি, ফিশারিজ ছাড়াও তৈরী করবো একটা রিসোর্ট ৷
যেখানে কপোলরা আনন্দ করতে এখানে আসবে ৷ বললাম “মনপুরা” ছবিটা দেখেছ? মাথা নাড়ালো উপর-নীচ ৷ আসলে এই চরের জীবন ওর কাছে একটা অবরুদ্ধ কারাগার মনে হয় ৷

কলেজ পড়ুয়া একজন মেধাবী ও স্মার্ট মেয়ের জন্য হয়তো এটা তার বাসযোগ্য স্থান নয় ৷
আমার রিসোর্টটা হলে তুমি যাবে?
আমারতো এখনি যেতে ইচ্ছে করছে বলে অনেকটা সময় চুপ থেকে জয়িতা লজ্জা জড়ানো কন্ঠে বললো, “ইচ্ছে থাকলে অবশ্য এ রুমটাকেও রিসোর্ট ভাবা যায় ৷” আমি হতবাক ৷ হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে ৷ কথা বেরুচ্ছে না অথচ সবাই আমাকে বাকপটু বলে ৷ কী করবো ভাবতে পারছি না ৷ শুধু জানি এ কাজটা পুরুষকেই শুরু করতে হয় ৷
পাশে বসা মেয়েটাকে মনে হচ্ছে গ্রীক দেবীর নগ্ন মূর্তিকে কেউ কালো কাপড়ে ঢেকে রেখেছে ৷ এক ঝটকায় উম্মোচিত করি দেবীর নগ্ন রুপ ৷ অপরুপ ভাষ্কর্য ৷ শিল্পী যেমন শিল্পের গর্ব করে তেমনি শিল্পও চায় নিজেকে বিকশিত করতে ৷ চায় তাকে উপভোগ করুক ৷ এটা চরম সত্য ৷ তাই উঠে পড়ে লেগে যাই সত্য উদঘাটনে ৷ গভীর থেকে আরো গভীরে ৷ হারিয়ে না যাওয়া অবধি ৷
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ফিরে আসি বাস্তব পৃথিবীতে ৷ জয়িতাই দরজা খোলে ৷ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে ওর বাবা ৷ সমস্ত ঘরে চোখ বুলিয়ে নির্ণিমেষ তাকিয়ে আছে আমার দিকে ৷ ক্রুর দৃষ্টি ৷ আচ্ছা উনি কি কিছু বুঝে ফেলেছেন কিংবা সন্দেহ? কিছুটা ভীত লাগছে নিজেকে ৷ অন্যদিকে চোখ ফেরালাম ৷ ব্যাগ গোছাতে হবে ৷ চলে যেতে এখনি৷ শাহীন এখনো আসছে না ৷ ব্যাক প্যাকটা কাঁধে ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম দ্রুত ৷ গন্তব্য নৌকো ঘাট ৷ রাস্তায় শাহীনকে পেলাম ৷ হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম Lets go. Quick. ও কিছু না আমাকে অনুসরন করলো ৷ না ফিরেও বুঝতে পারছি ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চেয়ারম্যান ৷ মনকে বোঝালাম ক্ষমতা হারানো চেয়ারম্যানের ক্ষমতাই বা কতটুকু?