বড়দিন উদযাপনের তাৎপর্য

0
286

ফাদার নরেন জে. বৈদ্য:

বিশ্বের প্রায় ১৩০ কোটি কাথলিক সহ অন্যান্য অন্যান্য মন্ডলীর (ডিনোমিনেশন) বিশ্বাসীভক্তগণও বড়দিন উদ্যাপন করবে। বড়দিনে আমরা স্মরণ করি ২০২০ বছর আগে জীর্ণতার বন্দীদশা থেকে মুক্তি করতেই যীশুকে ত্রাণকর্তারূপে এই জগতে এসেছিলেন। বাইবেলে সাধু যোহন বলেন “তুমি তার নাম রাখবে যীশু, কারণ তিনইি আপন জাতির মানুষকে তাদের পাপ থেকে মুক্ত করবেন” (মথি ১:২১)।

বড়দিনের বড় কথা ঈশ্বর পুত্র মানুষ হয়েছেন যেন আমরা ঈশ্বর – সদৃশ হয়ে উঠি। যীশু মানুষ হলেন মানুষ যেন মনুষত্বে উন্নত হয়। মানুষ যেন মানবিক ও খ্রিষ্টিয় মুল্যবোধে জীবন যাপন করে। মানুষ যেন মানুষকে মর্যাদা সম্মান দেয়। সত্যি কথা বলার অনুরোধে বলতে হয় মানুষ জন্মের কারণে বংশের কারণে বৈষম্য আচরণ করে। সমাজে যাদের পদবী দাস মন্ডল হালদার তারা সঠিক মর্যাদা পায় না। বড়দিন উদযাপনের চেতনা হলো মানুষের অন্তর জগৎকে আলোকিত করা ও গোটা জীবনটাকে খ্রিষ্টিয়করণ করা।

বাইবেলে যীশু খ্রিষ্টের দেহধারণের প্রয়োজনীয়তা
প্রবক্তা ইসাইয়া বলেছেন, পৃথিবীর বুকে মঙ্গলময় ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে মুক্তিদাতার আবির্ভাব ঘটবে। তাঁকে বলা হবে ‘ইম্মানুয়েল’, অর্থাৎ “ ঈশ্বর আমাদের সঙ্গেই আছেন” ( ইসাইয়া ৭:১৪, দ্র: মথি ১: ২৩)। জেরেমিয় লিখেছেন : “তাঁর এই নাম রাখা হবে; ‘ভগবানই আমাদের ধমিষ্ঠতা’’ (জেরেমিয়া ২৩:৬)। “যখন সময় পূর্ণ হল, তখন পরমেশ্বর এই পৃথিবীতে পাঠালেন তাঁর আপন পুত্রকে; তিনি জন্ম নিলেন নারী গর্ভে।… এমনটি ঘটেছিল, যাতে তিনি বিধানের অধীনে পড়ে থাকা যত মানুষের মুক্তিমূল্য দিতে পারেন, যাতে আমরা হয়ে উঠতে পারি পরমেশ্বরের পুত্র” (গালাতীয় ৪:৪-৫)।

প্রবক্তা জাখারিয় বলেছেন, সেই যে রাজা আসছেন, তিনি হবেন নম্র, কোমল-হৃদয়, শান্তিপ্রিয় মানুষ। তাঁর রাজ্য পৃথিবীর সর্বত্রই স্থাপিত হবে” (জাখারিয় ৯: ৯-১০)। শান্তি দিতেই শান্তিরাজ যীশুর আগমন এই পৃথিবীতে। যীশু খ্রীষ্টের দেহগ্রহণের ফলে শান্তি রসে ভরে উঠে পৃথিবী। যীশুর জন্মের সময় স্বর্গদূতবাহিনী গেয়ে উঠেছিল “জয় ঊধর্¦লোকে পরমেশ্বরের জয় ! ইহলোকে নামুক শান্তি তাঁর অনুগৃহীত মানবের অন্তরে” (লুক ২: ১৪)।

খ্রিষ্টের দেহধারণে দ্যুলোক ভুলোক উৎসবমূখর
Christmas শব্দটি বিশ্লেষণ করলে পাই—– “A Child Has been boRn for us son gIven to uS authoriTy rests upon eiM and he is nAmed JeSus.”

বড়দিনে আমরা স্বয়ং অসীম ঈশ্বরের সসীম মানরূপে জন্মগ্রহণের স্বরণ দিবস উদ্যাপন করি। ঈশ্বর এই পৃৃথিবীতে মানুষের মত মানুষের ঘরে জন্ম নিলেন যেন তিনি মানুষের সঙ্গে মিলিত হতে পারেন। “আজ দায়ুদ নগরীতে তোমাদের জন্য এক এাণকর্তা জন্মেছেন তিনি খ্রীষ্ট প্রভু (লুক ২:১০-১১)। বড়দিনে তাই তো দ্যুলোক ভূলোক হয়ে উঠে উৎসবমুখর। তাই তো কবি রবীন্দ্রনাথ জীবনবোধ ও মানবিক চেতনায় আনন্দে আল্পুত হয়ে গেয়েছেন : তাই তোমার আনন্দ আমার ওপর, তুমি তাই এসেছো নীচে, নইলে তোমার প্রেম হত যে মিছে।”

উপসংহার
যীশু খ্রিষ্টের দেহধারণ কি দাবী করে? প্রতিদিনই আমাদের জীবনে খ্রীষ্ট জন্ম গ্রহণ করতে পারেন যদি আমরা খ্রীষ্টের জীবনাদর্শ অনুসরণ করি অর্থাৎ সততা, ন্যয্যতা ও প্রেমের পথে জীবন যাপন করি। মনে হয় এই অর্থেই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন ‘‘যেদিন সত্যের নামে ত্যাগ করেছি, যেদিন অকৃত্রিম প্রেমে মানুষকে ভাই বলতে পেরেছি, সেই দিনই পিতার পুত্র আমাদের জীবনে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই দিনই বড়দিন – যে তারিখেই আসুক।”

আমরা আত্ম মূল্যায়ণ করি – এই বারের বড়দিন আমাদের কাছে কি দাবী করে? ‘‘যীশু খ্রিষ্টের আগমনে আমাদের জীবনে সত্যিই কি কোন পরিবর্তন এনেছে? প্রভাব ফেলেছে? মানুষ হয়ে যীশুর এই পৃথিবীতে আসার একমাত্র উদ্দেশ্যই হল মানুষের সাথে মিলন ও একাত্বতা। দু:খের কথা সমাজে দেখি অশান্তি দলাদলি সম্প্রীতির অভাব। খ্রিষ্টিয় মনোভাব পরিলক্ষিত হয় না। লুক ২:৭ পদে বাইবেলে পাই। শিশুটিকে তিনি কাপড়ে জড়িয়ে একটি জাবপাত্রে শুইয়ে রাখলেন, কারণ পান্তশালায় তাঁদের থাকার কোন জায়গা জোটেনি।” প্রতিদিনকার যাপিত জীবনে দেখি খ্রিষ্ট যীশু এখানো আমাদের হৃদয়ে স্থান পায় না, জায়গা জোটে না। ৭টি রিপুকে হৃদয়ে আসন দেই, আমরা অন্ধকারের পথে চলি।