প্রকল্পের কাজে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে পিপিএস এবং আরএমএস সফটওয়্যার চালু

0
141

ঢাকা, ০৪ এপ্রিল ২০২২: সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইনে এজেন্সি থেকে প্রকল্প প্রণয়ন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদন এবং অনলাইনে গবেষণা আবেদন গ্রহণ, বাছাই এবং অনুমোদনের লক্ষ্যে দুটি ডিজিটাল সিস্টেমের উদ্বোধন করা হয়েছে।

পরিকল্পনা বিভাগের এনইসি সম্মেলন কক্ষে রবিবার (০৩ এপ্রিল, ২০২২) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব এম. এ. মান্নান এমপি।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব ড. শামসুল আলম এবং আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, সচিব, পরিকল্পনা বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন এসডিপি প্রকল্পের যুগ্মপ্রধান ও প্রকল্প পরিচালক জনাব মোঃ ইউনুছ মিয়া। এটুআই-এর চীফ ই-গভর্নেন্স স্ট্যাটিজিস্ট জনাব ফরহাদ জাহিদ শেখ পিপিএস সফটওয়্যারের প্রেক্ষাপট, সেবা পদ্ধতি এবং পরবর্তী করণীয় বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা প্রদান করেন। পরিকল্পনা বিভাগ ও কমিশনের ডিজিটাল সার্ভিস রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন এসডিপি প্রকল্পের উপপরিচালক জনাব মোঃ তমিজ উদ্দীন আহমেদ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘উন্নয়ন প্রকল্পের ডিজিটাল প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ (এসডিপিপি)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রণীত প্রজেক্ট প্রসেসিং, এপ্রাইজাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (পিপিএস) ও রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরএমএস) নামের দুটি ডিজিটাল সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়। এতে শুরু থেকেই কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে আসছে এটুআই-এর ডিজিটাল সার্ভিস এক্সিলারেটর, আইসিটি বিভাগ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব এম. এ. মান্নান এমপি বলেন, “প্রজেক্ট ও রিসার্চ সম্পর্কিত দুটো অনলাইন সফটওয়্যারের মধ্য দিয়ে আজকে ডিজিটাইজেশনের বড় একটি কাজ শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রজেক্ট ও রিসার্চের বিষয়ে অনেক পেপারওর্য়াক ও কারেকশনের কাজ করতে হয়। এগুলো এই সিস্টেমে চলে আসলে কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যাবে। সিস্টেমগুলোকে মিসচিফপ্রুফ করার প্রস্তাব উপস্থাপন করে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার সহ যেসব মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বেশি তাদেরকে নিয়ে ওয়ার্কশপ বা ক্র্যাশ কোর্স করাতে পারি। আশা করছি এর মাধ্যমে জনগণ, সরকার ও আমাদের সকলের উপকার হবে। আর জনগনের উপকারের মাধ্যমে তাদেরকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি বলেন, আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাত্র ১৩ বছরে স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ জনগণকে উপহার দিয়েছে বর্তমান সরকার। এত দ্রুত, ব্যাপকভাবে এবং কমসময়ে পৃথিবীর আর কোনো দেশ ডিজিটাল হয়নি। আমাদের অবকাঠামো তৈরি এবং প্রস্তুতি ছিল বলেই আমরা করোনার মধ্যে একনেক সভা, মন্ত্রিপরিষদ সভা প্রযুক্তিগত কারণে একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি। যার ফলে এই দুই বছরে আমাদের ৬ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় ২,৫ ডলার ছাড়িয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যেসকল উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আসে সেসকল মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ করতে হবে। আজকের উদ্বোধন হওয়া দুটি সিস্টেমের কস্ট ইফেক্টিভ ও রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট অনেক বেশি। ডিজিটাল বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সময়, খরচ এবং হয়রানি হ্রাস সম্ভব হচ্ছে। এ লক্ষ্যে এটুআই এর সহযোগিতায় পরিকল্পনা বিভাগে ডিজিটাল সার্ভিস রোড ম্যাপ ও ডিজিটাল সার্ভিস ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ও পরিকল্পনা ল্যাব করা হয়েছে। আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা বিভাগের পাশে থেকে ডিজিটাল সার্ভিস প্রদানের জন্য যথাযথ ডিজাইনসহ আনুষঙ্গিক সহায়তার প্রদান করা হবে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, “ডিজিটাল অফিস ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিবীক্ষণ, মূল্যায়নসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দেশবাসীকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। বিশেষ করে সকল উন্নয়ন প্রজেক্টের কাজগুলো অনালাইনে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হলে কাজের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি আসবে। এই কাজটি করতে পরিকল্পনা বিভাগকে সহযোগিতা করায় তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ক্ষেত্রে সকল মন্ত্রণালয়ের সাথে প্লানিং কমিশনের কোওর্ডিনেশনে ইন্টার-অপারেবিলিটি সুবিধা সম্পন্ন এই সফটওয়্যার আমাদের কাজের দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছি।

উল্লেখ্য, প্রজেক্ট প্রসেসিং অ্যাপ্রাইজাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (পিপিএস) সফটওয়্যারটি ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে এজেন্সি থেকে প্রকল্প প্রণয়ন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ এবং প্রক্রিয়াকরণের পর অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা যাবে। ফলে সময়, ব্যয় ও যাতায়ত কমবে এবং সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। অনলাইনে প্রস্তুতকৃত প্রকল্পের একটি সেন্ট্রাল ডাটাবেইজ তৈরি হবে এবং প্রকল্পের দ্বৈততা পরিহার করা যাবে। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পিপিএস একটি ডিসিশন মেকিং টুলস হিসেবে প্রণীত হচ্ছে যার মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন বাজেটের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এলাকাভিত্তিক এবং অর্থবছর অনুযায়ী চলমান প্রকল্পের সংখ্যাসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিবেদন এ সফটওয়্যার থেকে প্রণয়ন করা যাবে। পিপিএস সফটওয়্যারটিতে মোট ৪টি মডিউল এবং ২৮টি ফিচার রয়েছে। এই সফটওয়্যারটির মাধ্যমে প্ল্যানিং ডিভিশনের ১৩টি সেবা অটোমেট হবে।

অন্যদিকে, রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরএমএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (এসএসআরসি) সংশ্লিষ্ট গবেষকদের নিকট থেকে গবেষণার আবেদন অনলাইনে গ্রহণ, বাছাই ও অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।

গবেষণালব্ধ ডকুমেন্ট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষণ এবং জাতীয় পরিকল্পনা প্রেরণের ক্ষেত্রে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আরএমএস সফটওয়ার ব্যবহারে গবেষকদের সময়, ব্যয় ও যাতায়ত সাশ্রয় হবে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনলাইনে গবেষণার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে। আরএমএস সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে গবেষণার আবেদন বাছাই ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। এই সফটওয়্যারটিতে মোট ৪টি মডিউল এবং ৫৩টি ফিচার রয়েছে। এই সফটওয়্যারটির মাধ্যমে প্ল্যানিং ডিভিশনের ১৫টি সেবা অটোমেট হবে।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, আইসিটি বিভাগ ও এটুআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।