পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ৭দিন ব্যাপী মেলা শুরু

0
262

চঞ্চল দাস গুপ্ত, কক্সবাজার, ১৭ মার্চ ২০২২:

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পর্যটন নগরীর পাসপোর্ট অফিসের সামনে মুক্তিযুদ্ধ মাঠে ৭ দিন ব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ‘মুক্তির উৎসব ও সুবর্ণজয়ন্তী মেলা ২০২২’ আয়োজন করে।

কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত সরকারি প্রায় প্রত্যেকটি দপ্তরের একটি করে স্টল দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলায় কর্মরত সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কক্সবাজারে চলমান তাদের নানাবিধ কর্মকান্ডের পসরা সাজিয়ে বসেছে এই মেলায়।

কারিতাস বাংলাদেশের স্টলে গিয়ে দেখা যায় তারা প্রদর্শন করছে কক্সবাজারে অবস্থানরত মায়ানমার থেকে জোরপূর্বকভাবে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিষ্ঠানের নানান কাজের রেপ্লিকা। তাদের স্টলের সামনে গেলেই দেখা যায় করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য রোহিঙ্গাদের জন্য পানির সুব্যবস্থাসহ হাত ধোয়ার স্ট্যান্ড।

এছাড়া কারিতাস বাংলাদেশ তাদের উপকারভোগী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের হাতে তৈরী নানান সাংস্কৃতিক উপকরণ- হাতপাখা, মাদুর, দেয়ালে ঝুলানো বাহারি রংয়ের নকশা করা কাপড়, বিভিন্ন পোশাক পরিচ্ছদ, নানান ধরনের প্রকল্প সম্পাদনের ওপর প্রকাশনা, বই প্রদর্শনীতে রেখেছে তাদের স্টলে।

মেলায় অংশগ্রহণ করে নিজ নিজ স্টলে সরকারি নানান দপ্তর গুলোও কক্সবাজারে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের তথ্য প্রদর্শন করছে বিভিন্নভাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কানিজ ফাতেমা আহমেদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো হাসানুজ্জামান, পিপিএম; জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী; কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী; কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুর হক চৌধূরী; সদর হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট মামুনুর রহমান; শিক্ষক, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীগণ।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ”আমাদের নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানতে হবে। এদেশের ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা আছে। বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির জন্য ৪,৬৮২ দিন অথবা প্রায় ১৪ বছর জেলে কাটিয়েছেন।”

১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিজয়ী সংসদ সদস্য বর্তমানে কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আবেগাপ্লুত হয়ে স্মৃতিচারণা করে বলেন, ”৭০’এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বা সরকাল গঠন না করলে বিশ্বশক্তি বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতো না। এই বাংলাদেশ বিনির্মানে তখন বিচক্ষণতার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”

তিনি আরো বলেন, ”শিশুদের যত্ন নিতে হবে। তারাই আগামীর ভবিষ্যৎ। এই শিশুদের পিছনে শ্রম দিতে হবে। দুবাই-সোদি আরব থেকে টাকা এনে বিশাল বিল্ডিং বানালে হবে না, শিশুদের মানুষ করতে হবে।”

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি গান দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন কানিজ ফাতেমা আহমেদ। অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে কানিজ ফাতেমা বলেন, ”সন্তান গর্ভে আসার সাথে সাথেই তাদের যত্ন শুরু করতে হবে। শিশুদের শিক্ষিত, সাহসী, নিয়মানুবর্তী হতে হবে।”

জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ তার বক্তব্যে বলেন, ”আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বঙ্গবন্ধুর জন্যই আমরা এই সোনার বাংলা পেয়েছি। আজকে আমি জেলা প্রশাসক হয়েছি, কেউ ডাক্তার হয়েছে, কেউ উকিল হয়েছে। যে যা হয়েছি, এসব তারই অবদান। আমি বঙ্গবন্ধুর ঋনস্বীকার করছি।”

তিনি আরো জানান, এই মেলায় জয় বাংলা কনসার্ট হবে। এই জেলায় অনেক গুলো প্রকল্প উন্নয়ন চলমান রয়েছে। এখানে কি হচ্ছে, সেগুলো এই শিশুদের জানাতে হবে। 

আমার দেখা নয়াচীন, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, এই তিনটি বই তিনি শিশুদের পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ। বই গুলোর ওপর কুইজ, বিতর্ক আয়োজন করারও প্রয়োজনীতার কথা বলেন।

বক্তব্যের সময় শিশুদের জন্য চলমান মেলা সম্পর্কে ৫০০ শব্দের একটি রচনা প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক। বিষয় হবে মুক্তির উৎসব ও সুবর্ণ জয়ন্তী মেলা ২০২২। অনুষ্ঠানে আলোচনাপর্ব শেষে জেলা প্রশাসক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের মাঝে পুরষ্কার তুলে দেন।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। সেদিনের সেই খোকাবাবু হিসাবে পরিচিত শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দিয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। তাঁর নেতৃত্বেই হাজার বছরের ইতিহাস পার হয়ে বাঙালি বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র পেয়েছে। তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার সম্ভান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুত্ফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। খোকা নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে  হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারী।