ধর্মদর্শন ও বিজ্ঞানের একটি বিশেষ বই

7
200


রায়হানুজ্জামান রিয়াদ

বহুমাত্রিক লেখক সম্পাদক কবি ও কলামিস্ট শহিদুল ইসলাম নিরবের ব্যতিক্রমধর্মী সৃষ্টি ‘ধর্মদর্শন ও বিস্ময়ের বিজ্ঞান‘ বইটি। এটি প্রকাশ করেছে বেহুলা বাংলা প্রকাশনি।

লেখক সদ্য জাগ্রত চেতনা শুধুমাত্র সত্য আদর্শের প্রচার এবং বাস্তবতার নিখুঁত শিল্পায়নেই সীমাবদ্ধ নয় বরং অগ্রগামী বিজ্ঞানের আলোকে ধর্ম , দর্শন এবং মানবতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্তরে অনুভব করতে চেয়েছেন পরম স্রষ্টা এবং সৃষ্টিকে । স্রষ্টা এবং সৃষ্টিকে গভীর উপলব্ধির মাধ্যমে সত্যানুসন্ধানের মৌলিক আগ্রহের শৈল্পিক প্রকাশই ‘ ধর্মদর্শন ও বিস্ময়ের বিজ্ঞান ‘।
লেখক বইটির শুরুতেই অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন , ‘স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে নিয়ে লেখা কঠিন বিষয়’ । তবে পরবর্তীতে বিজ্ঞানময় বর্ণনা এবং ধর্মের প্রতিষ্ঠিত সত্যের অভূতপূর্ব সন্মিলনে স্রষ্টার অস্তিত্বকে উপলব্ধির সাহসী পদক্ষেপ দেখিয়েছেন তিনি । নিজেকে জানা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ? নিজেকে জানার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি ? সত্যানুসন্ধানি মানুষ মাত্রই জানেন নিজেকে জানার প্রচেষ্টা ছাড়া স্রষ্টা এবং সত্যের অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা অত্যন্ত বোকামি । তাইতো লেখক মহান সাধক মনসুর হাল্লাজ , লালন সাঁইজি , সক্রেটিস প্রমুখের প্রতিষ্ঠিত দর্শনের সাথে সুর মিলিয়ে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনের আলোকে বস্তুবাদী বিজ্ঞানীদের নিরেট তত্ত্বের চেতনায় গেয়েছেন নিজেকে জানার গান । এ গান যেন স্রষ্টা এবং সমগ্র সৃষ্টির অভিন্ন সত্ত্বার প্রতিষ্ঠিত প্রমাণপত্র । মানব ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতা সত্য এবং বাস্তব অস্তিত্বকে উপলব্ধির পথে অন্তরায় হতে পারে নি । কেননা মানুষের জ্ঞান স্পৃহা এবং অধ্যবসায়ের ক্ষমতা প্রচন্ড । প্রকৃতির নীরব ভাষাকে উপলব্ধির অব্যার্থ হাতিয়ার গণিতশাস্ত্র । গণিতশাস্ত্রের সঞ্জীবনায় পদার্থ বিজ্ঞান , রসায়ন শাস্ত্র , জীববিজ্ঞানের আলোকে মানুষের সীমাবদ্ধ চেতনা প্রকৃতি অবাস্তব অস্তিত্বকে বোঝার দুরন্ত সাহস দেখিয়েছে ।
লেখকের গাণিতিক ব্যাখ্যাসমৃদ্ধ সুসংহত বিবৃতির এই সাহসিকতার বাইরে নয় । মহাবিশ্বের উদ্ভব এবং পরিণতির অনন্ত জিজ্ঞাসা , ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণু হতে সুদূর নক্ষত্র সর্বত্র বিরাজমান সুশৃঙ্খলতার অবলোকন লেখকের অনুসন্ধানি মনকে খানিক হলেও তৃপ্ত করেছে ।
আত্মার অস্তিত্ব বিজ্ঞানের কোনো প্রতিষ্ঠিত সত্য নয় । কারণ হয়তো বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা । তবে অনুভবের গভীরে গমন এবং দর্শনের তাত্ত্বিক চেতনা আত্মার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারেনি ।

লেখকের বর্ণনায় আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব , মহান স্রষ্টা কর্তৃক মানুষকে প্রতিনিধি নির্বাচন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ মোহাম্মদ (সাঃ) এর চিরন্তন আদর্শের আলোকে মানবধর্মের বিজয় বর্ণিত হয়েছে । সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় ইসলামের অকুন্ঠ সমর্থন লেখকের অন্যতম অনুপ্রেরণা । লেখক স্পষ্টতই বিভেদের বিপক্ষে । বিভেদ স্রষ্টার বিধান নয় । লেখকের বলিষ্ঠ অভিমত – পুঁজিবাদীরা পুঁজিবাদের অভিশাপেই নিশ্চিহ্ন হবে । লেখক এক বিশ্বসরকারের আগমনে বিশ্বাসী যিনি সাম্যবাদের বলিষ্ঠ প্রতীক । এই সাম্যবাদ সকল সত্যকে ধারণ করবে , এই সাম্যবাদ সকল শুদ্ধ চেতনায় মানবচেতনাকে করবে সমৃদ্ধ । এই সাম্যবাদের বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠা মানবসমাজে ত্বরান্বিত করবে শান্তি , স্রষ্টা এবং সৃষ্টির পবিত্র মিলনে বিশ্বসংসারের সকল অন্ধকার দূর হবে – লেখকের এটাই প্রত্যাশা ।

যে কোনে বয়সের পাঠক যেকোনো সময় তার চিন্তার জগতকে সমৃদ্ধ করতে ডুব দিতে পারেন লেখক শহিদুল ইসলাম নিরবের ‘ধর্মদর্শন ও বিস্ময়ের বিজ্ঞান’ বইটিতে ।

বইটি প্রকাশ করেছেন বেহুলা বাংলা প্রকাশন, প্রচ্ছদ করেছেন রাশেদুর রহমান মূল্য দুইশত টাকা।