চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের সাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ

0
257

ফয়সাল আজম অপু, নিজস্ব প্রতিবেদক

উপবৃত্তির টাকা দেয়ার কথা বলে সাদা কাগজে অভিভাবকদের সাক্ষর নিয়ে তা ব্যবহার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ জন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এতে অভিভাবকদের সাক্ষর জালিয়াতি করে নিজের পক্ষে ফায়দা হাসিলের অসৎ উদ্দেশ্যের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকতা ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চৌহদ্দীটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী ৩ শিক্ষক মোসা. নুরুন্নাহার খাতুন, মোসা. কামরুন্নাহার ও নিলুফা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরান আলী। তবে অভিভাবকদের সাক্ষর ব্যবহার করে ৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রদানের কথা জানেন না অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা সাক্ষর প্রদানকারী অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ, উপবৃত্তির টাকা দেয়ার কথা বলে সাদা কাগজে অভিভাবকদের সাক্ষর নিয়ে তাদেরকে না জানিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছেন প্রধান শিক্ষক কামরান আলী। ৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পর্কে কিছুই জানেন না দাবি অভিভাবকদের।

সুমাইয়া খাতুন, সুলতানা, শাহনাজ খাতুন, মিলিয়ারাসহ আরো কয়েকজন অভিভাবক বলেন, চৌহদ্দীটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরান আলী, সহকারী শিক্ষক মোর্শেদা পারভিনকে দিয়ে আমাদেরকে ফোন দিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে বলেন। উপস্থিত হলে উপবৃত্তির টাকা দেয়ার কথা বলে সাদা কাগজে সকলের সাক্ষর নেয়। পরে আমরা জানতে পারি, সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে সেখানে ৩ জন সহকারী শিক্ষকের নামে ভুয়া, মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছেন প্রধান শিক্ষক এবং আমাদেরকে অভিযোগকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সকল অভিভাবকদের জন্য অত্যন্ত মানহানিকর, অসম্মানজনক ও প্রতারণামূলক। তারা আরো জানান, বাস্তবে বিদ্যালয়ের সহকারী ৩ শিক্ষক মোসা. নুরুন্নাহার খাতুন, মোসা. কামরুন্নাহার ও নিলুফা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে আমাদের কোন অভিযোগ নেয় এবং আমরা কোন অভিযোগও করিনি। প্রধান শিক্ষক কামরান আলী ও সহকারী শিক্ষক মোর্শেদা পারভীন সীমা মিথ্যা কথা বলে আমাদের সাক্ষর জাল করেছে। এই প্রতারণামূলক কাজের জন্য এই দুই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

সহকারী শিক্ষক মোসা. কামরুন্নাহার জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও সঠিক জমি দাতা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রামের লোকজন ও প্রধান শিক্ষকের মতবিরোধ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় জনসাধারণ কয়েক দফায় শিক্ষা কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি বরাবর প্রধান শিক্ষক কামরান আলীর বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে অভিযোগ করেন। একাধিকবার তদন্তের অংশ হিসেবে গত ১২ আগষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিদ্যালয়ে তদন্তে আসেন। কিন্তু সেদিন প্রধান শিক্ষক দারোয়ানের থেকে চাবি নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন এবং বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি। পরে স্থানীয় শিক্ষক হিসেবে আমাকে ডাকলে উপস্থিত হয়। আমি ও স্থানীয় আরো দুই শিক্ষক উপস্থিত হলে প্রধান শিক্ষক আমাদের প্রতি মনক্ষুন্ন হয়। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা এসব অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে প্রধান শিক্ষক উল্লেখ করেছেন, চাকুরিরত অবস্থায় ফাঁকি দিয়ে আমি নাকি মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছি। বাস্তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়েই আমি চাকুরিরত অবস্থায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছি।

অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কামরান আলী উল্লেখ করেন, সহকারী শিক্ষক মোসা. নুরুন্নাহার খাতুন ক্লাসে ফেসবুক ব্যবহার করেন, দায়সারা ক্লাস নেন এবং দুর্বব্যহারের কারনে আগের কর্মস্থল থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়। এবিষয়ে সহকারী শিক্ষক মোসা. নুরুন্নাহার খাতুন বলেন, আমি ২০০৯ হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছর দ্বারিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলাম। শুধুমাত্র বাড়ির কাছে হওয়ায় নিজেই বদলী নিয়েছি। সেখানকার প্রধান শিক্ষক হাসি রানী কুন্ডু জানান, নুরুন্নাহারকে অনেক অনুরোধ করলেও সে থাকেনি। বাড়ির কাছে বদলী নিয়ে গেছে। এখানে থাকাকালীন সময়ে কারো সাথে কোন দুর্বব্যবহার করেনি। বহুগুন সম্পন্ন শিক্ষক হিসেবে আমি তাকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে পেয়েছি। নুরুন্নাহার আরো জানান, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে সেখানে যেসব অভিভাবকদের সাক্ষর রয়েছে তাদের ২-৩ জন ছাড়া সকলেই ১ম, ২য় শ্রেণির অভিভাবক। অথচ আমি ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ক্লাস নেয়। এ থেকেই বোঝা যায়, সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। এছাড়াও আমি ক্লাসে কোনদিন ফেসবুক দেখিনি। শুধুমাত্র ৩য় শ্রেণির ইংরেজি ক্লাসটি মাল্টিমিডিয়ায় নিয়।

আরেক সহকারী শিক্ষক নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক মোর্শেদা পারভীন ও যুবাইদাতুন ফেরদৌস তাদের খেয়ালখুশি মতো নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করলে স্থানীয় লোকজন বাধা দিলে আমরা ৩ সহকারী শিক্ষক স্থানীয় হাওয়ায় ক্ষোভ থেকেই এমন মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কারন তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর করা অভিযোগের তদন্তে একাধিকবার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা। এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক কামরান আলীর সাথে যোগাযোগ করলে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক কামরান আলীর বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, সেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সহকারী শিক্ষকের সাথে অসদাচরণ ও অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক কামরান আলী ও শিক্ষিকা মোর্শেদা পারভীন সীমার বিরুদ্ধে। এর আগে ২০১৫ সালে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় চৌহদ্দীটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ”প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড়” শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়। এসব দুর্নীতির সঠিক বিচার না হওয়ার কারণে নতুন করে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সচেতন মহলসহ