গোপালগঞ্জে মে দিবসে প্যাকেজিং ফ্যাক্টরীতে চাকুরী পেল ৪৩ ভিক্ষুক

0
109

গোপালগঞ্জ থেকে মিজানুর রহমান মানিকঃ

“অবলম্বন – ভিক্ষা নয়, কর্মময়” এই বিশ্বাসকে অন্তরে ধারণ করে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে “অবলম্বন” কে ঘিরে আত্নসম্মান নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখলো গোপালগঞ্জে জেলার কোটালিপাড়া উপজেলাধীন কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলি গ্রামের ৪৩ জন ভিক্ষুক।

শনিবার দুপুরে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উপজেলার চৌরখুলি গ্রামে নির্মিত অবলম্বন প্যাকেজিং ফ্যাক্টরীতে ৪ জন পুরুষ ও ৩৯ জন নারী, মোট ৪৩ জন ভিক্ষুকের হাতে উৎপাদন কর্মী হিসেবে নিয়োগ পত্র তুলে দেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, যাদের মাসিক বেতন ধরা হয়েছে ৩ হাজার টাকা ও উৎপাদনের ব্যক্তিগত লক্ষমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ১০ ভাগ কমিশন।

কোটালিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে অবলম্বন প্যাকেজিং ফ্যাক্টরীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা।

অনুষ্ঠানে কোটালিপাড়া পৌরসভার মেয়র হাজ্বী মো: কামাল হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: মোহসিন উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো: আয়নাল শেখ, কুশলা ইউপি চেয়ারম্যান মো: কামরুল ইসলাম বাদল সহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা/কর্মচারী, রোভার স্কাউট এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কোটালিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, “মান্যবর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন এবং যাতে তারা আত্নসম্মান নিয়ে সমাজে বাঁচতে পারেন, সে লক্ষ্যে উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলি গ্রামে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও বাস্তবায়নে ৫ কাঠা জায়গার উপরে নির্মাণ করা হয়েছে অবলম্বন প্যাকেজিং ফ্যাক্টরী, যেখানে এই গ্রামের ৪৩ জন ভিক্ষুক তাদের নতুন পরিচয়ে একজন চাকুরিজীবী হিসেবে আত্নসম্মান নিয়ে বাঁচার সুযোগ পাবেন।”

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে অবলম্বনকে ঘিরে নতুন পরিচয়ে বাঁচার যুদ্ধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একজন উৎপাদন কর্মী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় শাহানারা অনেক খুশি, তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, স্বামী নেই, ১ মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে, সংসার চালানো ও মেয়ের পড়ার খরচ যোগাতে ভিক্ষা করতাম, কিন্তু এখন এই ফ্যাক্টরীতে চাকরি পেয়েছি, তাই আর কখানোই ভিক্ষা করতে যাবো না, এখানে চাকরি করে সম্মান নিয়েই বাঁচার চেষ্টা করবো।

“অবলম্বন” আইডিয়ার উদ্ভাবক জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, “একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে দক্ষ জনশক্তির কোনো বিকল্প নেই, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট ঘোষনা, প্রতিটি সেক্টরে আমাদেরকে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।”

তিরি আরো বলেন, “অবলম্বন প্যাকেজিং ফ্যাক্টরীর সকল উৎপাদন কর্মী প্রশিক্ষিত, তাদেরকে প্যাকেজিং পন্য তৈরীর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে, তাদের উৎপাদিত পন্য বিক্রির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে এই ফ্যাক্টরী, তাদেরও ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।”

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে নতুনভাবে নতুন পরিচয় নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে মানুষগুলো সম্পর্কে জেলা প্রশাসক বলেন, “আজ থেকে তাদের নতুন পরিচয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে, আজ থেকে তারা কেউ ভিক্ষুক নন, তারা প্রত্যেকে একেকজন উৎপাদন কর্মী, চাকুরিজীবী।”

তিনি উপস্থিত শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছেলে মেয়েদেরকে পড়ালেখা শেখাতে হবে, দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।