খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ সংশোধন আইন সংসদে দ্রুত পাশের জন্য নীতিনির্ধারকদের একাত্মতা প্রকাশ

0
57

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধনের অঙ্গীকার করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) অধিকতর শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে খসড়া সংশোধনী প্রস্তুত করেছে।

এই প্রেক্ষিতে রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩) বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুয়র (ডরপ) সিরডাপ মিলনায়তনে “খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ সংশোধন আইন দ্রুত পাশের গুরুত্ব” শীর্ষক জাতীয় সেমিনার আয়োজন করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ আশরাফ আলী খান এমপি, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশ করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসারসহ নানাবিধ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী দেশে তামাক ব্যবহার জনিত রোগে প্রতিদিন প্রায় ৪৪২ জন মানুষ মারা যায়। আমি আশাবাদী যে আইনটি দ্রুত পাশ ও কার্যকর হলে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।”

তিনি আরও বলেন সংশোধিত খসড়ায় যে ৬টি প্রস্তাবনা সংযুক্ত করা হয়েছে সেগুলো অত্যন্ত যুগপোযোগী এবং কার্যকরী। আইনটি দ্রত পাশ হলে সকল পক্ষই উপকৃত হবে।

তিনি আশ্বাস দেন মন্ত্রীপরিষদে সংশোধিত আইনটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং এর পক্ষে সকলেই মত দেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি সরকারের সকল পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের আইনটি দ্রুত পাশে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান।

“শুধু একটি সিগারেটের ফিল্টার ৮ লিটার পানি দূষিত করে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি পাশ করতেই হবে।”

প্রস্তাবিত সংশোধনগুলোকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে যেসকল ইতিবাচক সংশোধন আনা হয়েছে সেগুলো তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারকে অচিরেই বাস্তব রূপ দেবে বলে আমি মনে করি।”

জনাব আবু আলম মো. শহিদ খান, মহাসচিব, বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতি এবং সাবেক সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন ”বাংলাদেশের কিশোর ও তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশ করা এখন সময়ের দাবি।বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে (এফসিটিসি)-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা।

সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এএইচএম নোমান, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, ডরপ। তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় হতে হবে।“

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আজহার আলী তালুকদার, নির্বাহী উপদেষ্টা, র্ডপ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডর্‌প এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান ।

উল্লেখ্য, উক্ত অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের সদস্যগণ, গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ, ডরপ মাতৃ সংসদের সদস্যগণ এবং যুব ফোরামের সদস্যবৃন্দ খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশের গুরুত্ব আরোপ করে ৬টি সংশোধনী প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান।

ডর্‌প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় র্ডপ বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।