কিছু র‌্যাব কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ‘অত্যন্ত গর্হিত কাজ’ : প্রধানমন্ত্রী

0
227

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে র‌্যাব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় কোন কারণ ছাড়াই এ বাহিনীর কিছু কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ‘অত্যন্ত গর্হিত কাজ।’

তিনি বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) অপরাধীদের রক্ষা করে ও তাদের দেশে আশ্রয় দেয় এবং কোন প্রকার অপরাধ ছাড়াই আমাদের দেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এটাই তাদের চরিত্র। কাজেই তাদের ব্যাপারে এ ছাড়া আমি আর কি বলতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় এ কথা বলেন।

র‌্যাব আজ সকালে রাজধানীতে এ বাহিনীর সদরদপ্তরে লে. কর্ণেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

র‌্যাবের ১৫ ব্যাটালিয়নের প্রত্যেকটি ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে র‌্যাব ২, ১০, ১৩ ও ১৪’র ব্যাটালিয়ন সদরদপ্তর, র‌্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল, ‘মুজিব কর্ণার’ সম্বলিত র‌্যাব হেরিটেজ মিউজিয়াম উদ্বোধন করেন। তিনি র‌্যাব-৩ ব্যাটালিয়ন সদরদপ্তরের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের আশ্রয় এবং তাদের নাগরিকত্ব দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নারী ও শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করে সে সব খুনিদের ফেরত পাঠাতে তাঁর সরকার যুক্তরাষ্টের বিচার বিভাগের কাছে বার বার আবেদন জানিয়েছে।

তিনি বলেন, তাদেরকে ফেরত পাঠানোর পরিবর্তে তাদের দেশে তারা খুনিদেরকে আশ্রয় দিয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, তাঁর সরকার কোন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত থাকলে যে কোন আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্য, র‌্যাব বা পুলিশের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি আরো বলেন, কিন্তুু এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে তাদের কোন বাহিনী অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকলেও তাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। আবার তারাই কোন কারণ ছাড়াই আমাদের কিছু র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

যুক্তরাষ্ট্রে গুলি করে এক শিশুকে এবং বুটের পাড়া দিয়ে এক ব্যক্তিকে হত্যা করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আইন শৃংখলা বজায় রাখার নামে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার যে কোন সদস্য অপরাধ করলেও তাদের বিরুদ্ধে তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনা।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে যে কেউ অপরাধ করলে তার ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন না কি কারণে তারা হলি আর্টিসান ক্যাফে হামলাসহ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে র‌্যাবের সফলতায় কেন যুক্তরাষ্ট্র কষ্ট পেল।

তিনি বলেন, লজ্জাজনক বিষয় হচ্ছে যে বাংলাদেশের কিছু মানুষ দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, ‘তারা অপরাধী। তারা হয় চাকরি হারিয়েছে অথবা অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদস্যদের আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।

রমজান মাসকে সামনে রেখে কতিপয় কালবাজারীর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে যে কোন ধরনের মজুদদারীর বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান সত্ত্বেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে তিনি র‌্যাব সদস্যদের নির্দেশ দেন।

র‌্যাব অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির সাথে সঙ্গতি রেখে এ ব্যাপারে ব্যাপকভাবে সফল হলেও প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আরো বৃদ্ধি করতে র‌্যাব সদস্যদের নির্দেশ দেন। তিনি সমাজ থেকে মাদক সম্পূর্ণভাবে উৎপাটন না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জন¯্রােত ও সেখানে ক্রমবর্ধমান অপরাধের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই জেলায় র‌্যাবের একটি সম্পূর্ণ ব্যাটালিয়ন মোতায়েনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক ড.বেনজীর আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে র‌্যাবের বিভিন্ন কর্মকা- এবং সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এই বাহিনীর সফলতার একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ র‌্যাব গঠন করা হয় এবং একই বছরের ২১ জুলাই এই বাহিনী অভিযান শুরু করে।

র‌্যাব সদস্যরা ২০০৪ সালের আগস্টে ২৩ দুর্ধর্ষ অপরাধীর অন্যতম পিচ্চি হান্নানকে গ্রেফতারের পর লাইনলাইটে আসে।

শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে র‌্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং এভাবে তারা জাতির উন্নয়নে অবদান রাখছে।

তিনি বলেন, ‘দেশ ও জাতির উন্নয়নে র‌্যাবের অবদান অপরিসীম। দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান থাকায় আমরা প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পনা নির্বিঘেœ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

দেশব্যাপী ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বজায় থাকা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণের পূর্বশর্ত। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রচুর দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ অপরিহার্য।

সমাজে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তিনি র‌্যাব ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানান।

সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদক, সুন্দরবনে জলদুস্য ও বনদস্যু এবং দক্ষিণাঞ্চলে চরমপন্থী নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী র‌্যাবের প্রশংসা করেন।

জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আমুল পরিবর্তনের মাধ্যমে মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের জন্য র‌্যাবের প্রশংসা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সুন্দরবনের বনদস্যু ও জলদস্যু এবং দক্ষিণাঞ্চলের চরমপন্থীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। আত্মসমর্পণের পর সরকার তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, তারা এখন তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তাঁর সরকার র‌্যাবকে আরো শক্তিশালী ও আধুনিকায়নের জন্য কাজ করছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে অভিযান পরিচালনা সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তারা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

সরকার প্রধান আরো বলেন, র‌্যাব এখন সড়ক, আকাশ ও নৌ- তিন পথেই অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বাহিনীকে উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস মহামারিকালে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও এই মহৎ কাজে তাদের জীবন উৎসর্গের জন্য একটি বাহিনী হিসেবে র‌্যাবের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালে যে সব র‌্যাব সদস্যরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন,তাদের রুহের মাগরিফাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং দেশের মানুষকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন উপহার দেয়ার লক্ষ্যে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।