কাজিপুরে এক অদম্য সাহসী নারী ফুলেআরা ইমাম

0
91


কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের নদী বেষ্টিত নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন। প্রমত্তা যমুুনার ভাঙনে জীবন যেখানে মিশে গেছে কঠিন বাস্তবতার সাথে, আর এমনি কিছু নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে কেউ বা হারিয়েছেন প্রিয় জন কেউবা আবার বসতভিটা। এমন একটা সময় ছিলো যখন অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্হার কারণে চিকিৎসা সেবা এখানে ছিলোনা বললেই চলে, আর এই কারণে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে শত সহস্র মানুষ।বিনা চিকিৎসায় মৃত এসব মানুষের স্বজনেরা অনেকে স্বপ্ন দেখেছেন উন্নত চিকিৎসার, কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ করবে কে?

কিন্তু সবার দেখা স্বপ্ন পূরণ করলেন ফুলেআরা ইমাম সময়টা ১৯৮২ প্রায় চার দশক আগের কথা কোন এক রাতে কলেরা নামক ভয়াবহ রোগটা তখন চরের মানুষের ঘুম কেড়ে নেয়। চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মরতে থাকে শিশুরা। স্হানীয় কিছু হাঁতুড়ে ডাক্তার আর কবিরাজরা সেদিন ছিলো নীরব, উন্নত চিকিৎসা সামগ্রী, ঔষধের অভাব তাদের করে দিয়েছিলো বাকরুদ্ধ। মানুষের মৃত্যু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া যেনো কিছুই করার ছিলোনা তাদের। সেই রোগে ফূলোআরা ইমাম তাঁর ছোট ভাই সুজনকেও হারায়।

ভাই হারানোর ব্যাথায় ফুলেআরার বুকে জেগে ওঠে হাসপাতাল নির্মাণের স্বপ্ন। কিন্তু এযেনো এক রুপকথার দুঃসাধ্য চাওয়া। ভাই হারানোর ১বছরের মাথায় ফুলেআরার বিয়ে হয় স্হানীয় ডা. ইমাম হোসেনের সাথে, বিয়ের রাতেই ফুলেআরা স্বামীকে বলেন তাঁর স্বপ্নের কথা।মানুষের প্রতি স্ত্রীর অকৃত্রিম ভালোবাসা দেখে স্বামীও স্বপ্নের সারথী হলেন। গৃহিণী ফুলেআরা সংসার খরচ বাঁচিয়ে একটু একটু করে জমাতে থাকেন টাকা। প্রায় ১৫ বছরের সঞ্চিত ১ লক্ষ টাকা তুলে দেন স্বামীর হাতে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য। স্ত্রীর জমানো ১লক্ষ টাকা আর ইমাম হোসেন আরও কিছু যোগ করে ২০০৫ সালে নির্মাণ করলেন টিনশেড ঘর। এই ঘরেতেই শুরু হলো ফুলেআরার মানবসেবা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। উপকৃত হতে থাকলো চরের হাজারো মানুষ।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০৭ সালের মাথায় সর্বনাশী যমুনার থাবা থেকে শেষ রক্ষা হলো না মানবসেবা হাসপাতালের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর ভাগ্যের দোহাই না দিয়ে ফুলেআরা -ইমাম দম্পতি আবারও ২০০৯ সালে নতুন করে নির্মান করলেন হাসপাতাল, শুরু হলো চিকিৎসা সেবা। শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে ফুলেআরা ইমাম মানবসেবা হাসপাতালে বর্তমানে প্রত্যক্ষ -পরোক্ষভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে হাজারো মানুষ।

প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি পারে মানুষকে স্বপ্ন পূরণের উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে, ফুলেআরা ইমাম তাঁর জ্বলন্ত উদাহরন। একজন নারী হয়েও থেমে থাকেনি। নিজের দেখা স্বপ্ন পূরণের মধ্য দিয়ে চরের মানুষের জন্য গড়ে তুলেছেন তাঁর স্বপ্নের “আমেনা দৌলতজামান মানবসেবা হাসপাতাল “। তাঁর এই অদম্য সাহসিকতার স্বীকৃত স্বরুপ পেয়েছেন নানা পুরষ্কার ও সম্মাননা। তিনি ২০১২ সালে চ্যানেল আইয়ের পক্ষ থেকে “সাধক কিংবদন্তী পুরষ্কার “বাবদ নগদ দুই লক্ষ টাকা ও ক্রেস্ট সম্মাননা পান, ২০১৫ সালে রাঁধুনী ক্রির্তীমতি স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজের সৌজন্যে ১ লক্ষ টাকা ও ক্রেস্ট, ২০১৯ সালে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী ক্যাটিগরিতে” জয়িতা”রাজশাহী বিভাগীয় রানার্স আপ হন।

ফুলেআরা ইমাম বলেন-“আমার এই স্বপ্ন পূরণের পুরোটা সময় জুড়ে যিনি পাশে ছিলেন তিনি আমার স্বামী ডা.ইমাম হোসেন। এমন একজন বন্ধুর মতো স্বামীর জন্যই আমার হাসপাতাল গড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি চাই এই হাসপাতালের মাধ্যমে মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা পাক।

উল্লেখ্য, ফুলেআরা ইমাম বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন নিয়মিত, পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষরোপণ লাগানো সহ, নারী কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। মানুষের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে চরের বুকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত “হোটেল আরশী নগর” নির্মাণের উদ্যেগ নিয়েছে। #