কক্সবাজার জেলা উদীচী’র ত্রয়োদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

5
434

শোষণহীন সমাজ গড়তে প্রত্যয়ী উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
নিপীড়িত গণমানুষের অধিকার আদায়ে, মানবতার পক্ষে সর্বদা সোচ্চার একুশে পদকপ্রাপ্ত সনামধন্য সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কক্সবাজার জেলা সংসদের ত্রয়োদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভা চত্বরে শুক্রবার বিকাল ৪.০০ টায় উদীচী কক্সবাজার জেলা সংসদের সম্মেলন উদ্ধোধন ঘোষণা করেন সিপিবি কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি, বরেণ্য রাজনীতিক দীলিপ দাশ।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গ্রামবাংলা, শহরে-বন্দরে, এমনকি দেশের বাইরেও সাধারন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রয়েছে সর্বদা অবিচল।

ঐতিহাসিকভাবে প্রতিথযশা সাংস্কৃতিক সংগঠনটি সবসময়েই গেয়েছে গণমানুষের গান, সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে।


কল্যান পালের সভাপতিত্বে, জাহেদুল হক সুমনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন নাট্যজন এডভোকোট তাপস রক্ষিত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি সত্যপ্রিয় চৌং দোলন, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য রহমান মুফিজ, আবৃত্তিকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠক এডভোকেট প্রতিভা দাশ, প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক কবি নুপা আলম।

উদীচী কক্সবাজার সাধারণ সম্পাদক বোরহান মাহমুদ, সম্মেলন প্রস্তুুতি পরিষদের কো চেয়ারম্যান আশুতোষ রুদ্র প্রমুখ।

এসময় বক্তারা বলেন, “কখনো কখনো শত্রুর চোখরাঙানি, বুলেট, বোমা থামিয়ে দিতে চেয়েছে উদীচীর কর্মকাণ্ড। কিন্তু সত্যেন সেনের সঞ্জীবনী সংগীত ‘মানুষের কাছে পেয়েছি যে বাণী তাই দিয়ে রচিত গান মানুষের লাগি ঢেলে দিয়ে যাব মানুষের দেয়া প্রাণ’ উদীচীর কর্মীদের নিরন্তর অনুপ্রাণিত করেছে। কর্মীরা ছুটে গেছে মানুষের কাছে। মানুষের মন জাগাতে, নিপীড়িত মানুষের মুক্তির আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে।”

১৯ ফেব্রুয়ারি (শনিবার ) কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে উদীচী কক্সবাজার জেলা সংসদের দুদিন ব্যাপী সম্মেলনের সমাপ্তি হয় বলে জানিয়েছেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের সদস্য সচিব ফাল্গুনী হৈমু।

এক নজরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ঠিক আগের বছর ১৯৬৮ সালে পুরান ঢাকার নারিন্দায় সাইদুল ইসলামের বাসায় সত্যেন সেন, গোলাম মোহাম্মদ ইদুসহ কয়েকজন সমাজসচেতন তুরন্ত তরুণের কলমেই লেখা হয়েছিল উদীচী’র ইতিহাসের সূচনাপর্ব।

সেখানেই উদীচী গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি ছিলেন সত্যেন সেন, সহসভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ওয়াহিদ খান, সহসাধারণ সম্পাদক ইকরাম আহমেদ। এছাড়া ছিলেন রাজিয়া বেগম, ইকবাল আহমেদ, আখতার হুসেন, মাহফুজ আলী মল্লিক, তাজিম সুলতানা প্রমুখ।

এই সংগঠনের নাম কেন উদীচী?
উদীচী শব্দের অর্থ উত্তর দিক। রবীন্দ্রনাথ তাঁর একটি বাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘উদীচী’, সংগঠনটির গোড়াপত্তন ঘটেছিল ঢাকা নগরীর উত্তর দিকের নারিন্দার একটি বাসায়। এসব থেকেই অনুপ্রেরণা।

তবে সত্যেন সেন আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, নামকরণের তাৎপর্য আরও গভীর। উত্তরে থাকে ধ্রুবতারা। সেই ধ্রবতারা লক্ষ্য করেই আঁধার রাতে নাবিকেরা তাদের গন্তব্য ঠিক করে নিত। নামকরণের এই হলো তাৎপর্য।

শুধু গণসংগীতেই সীমিত ছিল না উদীচীর ভ্রমণ। পাশাপাশি নিয়মিত মঞ্চস্থ করেছে নাটক। কখনো কখনো শত্রুর চোখরাঙানি, বুলেট, বোমা থামিয়ে দিতে চেয়েছে উদীচীর কর্মকাণ্ড। কিন্তু সত্যেন সেনের সঞ্জীবনী সংগীত ‘মানুষের কাছে পেয়েছি যে বাণী তাই দিয়ে রচিত গান মানুষের লাগি ঢেলে দিয়ে যাব মানুষের দেয়া প্রাণ’ উদীচীর কর্মীদের নিরন্তর অনুপ্রাণিত করেছে। কর্মীরা ছুটে গেছে মানুষের কাছে। মানুষের মন জাগাতে, নিপীড়িত মানুষের মুক্তির আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে।

দেশে ও বিদেশে উদীচীর শাখা এখন ৩৭৬টি’র ও বেশি। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করে।