কক্সবাজারে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গণঅনশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত

0
150

কক্সবাজার থেকে চঞ্চল দাশগুপ্তঃ

কুমিল্লার নানুয়া দিঘির পাড়ে পূজা মণ্ডপে কুরআন পাওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী চলা সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও হত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজারে গণঅনশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) ভোর ৬ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের পৌরসভা গেট চত্তরে অবস্থান নিয়ে আট দফা দাবি জানিয়ে অনশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি সম্পন্ন করেন প্রতিবাদকারীরা। এ কর্মসূচিতে বক্তারা দেশব্যাপী চলা জঘন্য কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা নিরাপত্তার আইন প্রণয়নের দাবি জানান। সেই সাথে কুরআন রাখার ঘটনায় ইকবালের দ্রুত বিচার বাস্তবায়নের সাথে সাথে ন্যাপথ্যের কারিগরদের আইনের আওতায় এনে জনগণের সামনে উপস্থিত করার জোর দাবি জানান।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কক্সবাজার জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টুর সভাপতিত্বে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রীতির নজীর যুগ যুগ থেকে চলে আসছে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিন্দু-মুসলিমদের পাশাপাশি সমাহিত করার মধ্যদিয়েও সেটি ফুতে উঠেছে। লাল সবুজের পুাকায় মিশে আছে সর্বধর্মীয় মানুষের রক্ত। তাই আমাদের এ সম্প্রীতিকে যারা কুলশিত করতে চায় তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিৎ এবং নজীর তৈরি করা দরকার। তা না হলে এরা বার বার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করবে।

বক্তারা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা মোটেও কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় উল্লেখ করে বলেন, আমরা অণীতে এরকম আরও অনেক ঘটনা দেখেছি। কিন্তু কোন ঘটনায় সঠিক বিচার হয়নি। তাই এরা সাহস পায়, ইকবালদের মাধ্যমে এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফায়দা নিতে চায়। তাই আমরা চাই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ইকবাল ও তার ন্যাপথ্যের কারিগরদের বিচার করা হোক।

কক্সবাজার জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দনের সঞ্চালনায় গণঅনশন ও গণঅবস্থান’ কর্মসূচি শেষ করার আগে কেন্দ্রীয় সংগঠনের পক্ষে আট দফা দাবির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন। দাবিগুলো হচ্ছে-, শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে ও এর পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে ন্যুনতম ২০ লাখ টাকা প্রদান অথবা প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দিতে হবে।

দাবি করা হয়, বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে যারা তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাদেরও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কক্সবাজার জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্টের ট্রাস্টি বাবুল শর্মা, দুলাল চক্রবর্তী, এড.তাপস রক্ষিত, বিশ্বনাথ বন্দোপাধ্যায়,মিঠু, রাধা গোবিন্দ দাশ ব্রক্ষচারী,উদয় শংকর পাল মিঠু,মাস্টার জেমসেন বড়ুয়া, ডা. চন্দন কান্তি দাশ,সত্যপ্রিয় চৌধূরী দোলন,ডা.পরিমল কান্তি দাশ,স্বপন পাল নাজির, এড. প্রতিভা দাশ, দীপক দাশ,এড.বাপ্পী শর্মা,বলরাম দাশ অনুপম, সুজন শর্মা (রামু), চন্ডী আচার্য্য (ঈদগাঁও), রতন কান্তি দে (মহেশখালী), জনি ধর, দিপ্তী শর্মা,তপন দত্ত,সুনিল চৌধূরী,শাওন চক্রবর্তী,দীলিপ দাশ,রাজীব বিশ্বাস, সাগর পাল সাজু, সুমন দে আকাশ, ডা.ক্ষিরোধ কর্মকার, কমল পাল(কুতুবদিয়া), লিটন ধর,অন্তু পাল, রতন দে প্রমুখ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অমরবিন্দু বড়ুয়া, পরিমল বড়ুয়া, শুভদত্ত বড়ুয়া, বিপুল সেন,তপন ধর, চঞ্চল দাশগুপ্ত, সুমন চৌধূরী আগুন, দেবাশীষ দাশ দেবু, শ্রীমন্ত পাল সাগর, বুলবুল তালুকদার, ডা.উল্লাস ধর, সজল কান্তি দে, প্রিতম ধর, সুজন শর্মা জন, লালন পাল, সেবক পাল, মাস্টার সুমন শর্মা, প্রদীপ শর্মা, ডা. অজিত কান্তি দে, রুপস চৌধূরী, জ্যাকি কুমার সুশিল, মধু সরকার, সুশান্ত পাল বাচ্চু (রামু), রতন মল্লিক (রামু), অজয় আচার্য্য বিন্দু (ঈদগাঁও), পম্পি দাশ (ঈদগাঁও) সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ।