ইন্টারনেট কে চ্যালেঞ্জ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবেঃ কবি নির্মলেন্দু গুণ

508
1833

ইন্দ্রজিত সরকারঃ

কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, বর্তমানে ইন্টারনেটের সঙ্গে অনেকেই যুক্ত। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ইন্টারনেটের মাধ্যমে আরো বেশি কাজ করছেন। আমি নিজেও ইন্টারেনেটের সুবিধাভোগী। ইন্টারনেটের অবাধ বিস্তার আছে বলে যে লাইব্রেরির আবেদন শেষ হয়ে যাবে তা নয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক “আখলাকুল হোসাইন আহমেদ স্মৃতি গ্রন্হাগার” উদ্বোধনী অনলাইন অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।

রবিবার অনলাইন ভাচুর্য়াল সভায় তিনি আরো বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতেও কিন্তু প্রতিনিয়ত বই প্রকাশ, বিপণন ও সংরক্ষণ হচ্ছে। তাই ইন্টারনেটের ব্যবহার কিছুটা কমিয়ে লাইব্রেরিমুখী হতে হবে। ইন্টারনেটকে চ্যালেঞ্জ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

কবি গুণ বলেন, মানুষের কাছে বই পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকদেরও লাইব্রেরিমুখী হওয়া দরকার। শিক্ষকরা লাইব্রেরিতে গেলে শিক্ষার্থীরা উৎসাহী হয়।

তিনি বলেন, আজকাল দেখি শিক্ষকদের পড়ার অভ্যাস নেই। অনেকে মনে করেন বই পড়ে চাকরি পেয়ে গেলে আর বুঝি পড়তে হয় না। ব্যাপারটা তা নয়। নিজে সমৃদ্ধ না হলে সুন্দর পাঠদান সম্ভব হয় না। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবো শিক্ষকদের পাঠাভ্যাসের বিষয়টি লক্ষ্য করার জন্য। শিক্ষকদের পাঠদান ও পাঠাভ্যাস মনিটরিং করার ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

আখলাকুল হোসাইন আহমেদ সম্পর্কে তিনি বলেন, আখলাকুল হোসাইন আহমেদ হাওর অঞ্চলের একজন গুণী মানুষ ছিলেন। যুদ্ধচলাকালীন সময়ে তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। মহেষখালী পার হয়ে ভারতের দুর্গম এলাকা লেঙ্গুরা, রংড়া অঞ্চলে শরণার্থী হয়ে আমি গিয়েছিলাম। দেখেছি, তিনি কীভাবে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার জন্য কাজ করেছেন। যদিও আমি বয়সে তখন তরুণ। আমি কোনো দলের নেতা ছিলাম না বলেই সেভাবে পরিচয় হয়নি।

কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, লাইব্রেরিটির প্রতিষ্ঠাতা আখলাকুল হোসাইন আহমেদের সুযোগ্য সন্তান বিমান বাংলাদেশ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান। তার শিক্ষানুরাগী বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে শহীদ স্মৃতি কলেজ ও কলেজ অভ্যন্তরে সুসজ্জিত লাইব্রেরিটি করেছেন। আমি মনে করি এই লাইব্রেরির উদ্বোধন আমাকে দিয়ে না করিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে করাতে পারতেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এর অবদান সম্পর্কে অবহিত আছেন জানিয়ে আরো বলেন, সাজ্জাদকে স্নেহ করে এবং লাইব্রেরির প্রতি তার আলাদা দরদ আছে। তিনি ঘরে ঘরে লাইব্রেরির গড়ার কথা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী লাইব্রেরিটি উদ্বোধন করলে এর প্রসার, প্রচার এবং হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবনে আরো প্রভাব পড়তো।

শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি ও নেএকোনা জেলা প্রশাসক কাজী মোঃ আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফর হাসান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

এছাড়াও ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড.মুশফিকুর রহমান,উপসচিব ড. তরুন কান্তি সিকদার,অধ্যাপক বিধান মিএ,অধ্যক্ষ জীবন কৃষ্ণ সরকার,জেলা আ.লীগ সভাপতি মতিয়র রহমান,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রশান্ত রায়,নেএকোনা পৌরমেয়র নজরুল ইসলাম খান,মোহনগঞ্জ পৌর মেয়র লতিফুর রহমান রতনসহ প্রমুখ আলোচনা সভায় যুক্ত হন। মহাবিদ্যালয় ও গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা সাজ্জাদুল হাসান তার বক্তব্যে বলেন,বাবার স্বপ্ন ছিল এলাকায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি তা করে যেতে পারেননি। তাই আমি এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মোহনগঞ্জ উপজেলার আদর্শনগরে সরকারি সহায়তায় ‘শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়’স্থাপন করেছি। সেই মহাবিদ্যালয়েই লাইব্রেরি স্হাপন করা হয়েছে ‘আখলাকুল হোসাইন আহমেদ স্মৃতি গ্রন্থাগার’। তিনি জানান, লাইব্রেরিটিতে পাঁচ হাজার বই রাখার ব্যবস্থা আছে।বর্তমানে বিষয় ভিত্তিক ১২০০ বই আছে। একজন লাইব্রেরিয়ান একটি সফটওয়্যার দিয়ে লাইব্রেরির পুরো কার্যক্রম করতে পারে সেই ডিজিটাল ব্যবস্থা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কর্নারসহ বিষয়ভিত্তিক কর্নার থেকে বই সংগ্রহ করে সুসজ্জিত পরিবেশে বই পড়ার সুযোগ রয়েছে।আলোচনা সভা ও তথ্যচিএ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে এর যাএা শুরু করেন। উক্ত অনুষ্টানে বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষজন যুক্ত হন। 

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব থাকাকালীন সময়ে এলাকাবাসিকে নিয়ে হাওরাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে ডিঙ্গাপোতা হাওরপাড়ে এই মহাবিদ্যালয়টি স্থাপন করেন সাজ্জাদুল হাসান।বর্তমানে আবাসিক শিক্ষালয়টিতে ৬১৭জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ণ করছেন।