চট্টগ্রাম অফিসঃ
বনজপ্রাণী তক্ষক বিক্রির লোভ দেখিয়ে ঢাকার এনজিও কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে চট্টগ্রামে ফটিকছড়িতে এনে অপহরণের এক বছর পর তার লাশের সন্ধান মিলেছে।
বাংলাদেশ-ভারতের ফটিকছড়ি রামগড়ে গহীন জঙ্গল থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) একটি টিম হেলাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার শুরু করেছে।
এর আগে গতকাল বিকেলে অপহরণের সাথে জড়িত বিল্লাল নামে একজনকে রামগড় থেকে গ্রেফতারের পর তার স্বীকারোক্তিতে তাকে নিয়ে গতকাল রাতে সীমান্তের রামগড় গহীণ জঙ্গলে মাইলের পর মাইল হেঁটে পিবিআই টিম ঘটনাস্থলে পৌছে হেলাল উদ্দিনকে মেরে লাশ পুতে ফেলাল স্থান সনাক্ত করে।
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, তথাকথিত কোটি টাকা মূল্যের তক্ষক কমমূল্যে বিক্রির নাম করে গত বছরের ২২ নভেম্বর বাবুল সিকদার (৪২) নামে এক ঠিকাদার ও এনজিও সংস্থা সেতু বন্ধনের ম্যানেজার হেলাল উদ্দিন (৪৩)কে কৌশলে ফটিকছড়ি এনে অপহরণ করে।
পরে অপহরণকারীরা তাদের পরিবারের কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। কয়েকদিনের মাথায় অপহরণকারীরা বাবুলকে মুক্তি দিলেও এনজিও কর্মকর্তাকে অপহরণের পর হত্যা করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এমনকি হত্যার পর লাশ ফেলা দেয়া হয়েছিলো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের ৫০ ফুট গভীর গর্তে। হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মাথায় জড়িত একজনকে পিবিআই আটকের পর বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের পি বি আই পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, নামমাত্র মূল্যে তক্ষক বিক্রির কথা বলে এনজিও সংস্থা সেতু বন্ধনের ম্যানেজার হেলালকে গত বছরের ২৩ নভেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ভুজপুরের গহীন পাহাড়ে নিয়ে এসেছিলো অপহরণকারী দলের সদস্যরা। কিন্তু দাম নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় গর্তে।
এ ঘটনায় ভুজপুর থানায় একটি মামলা হলেও গত এক বছর ধরে হেলালের কোনো খোঁজ মিলছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছদ্মবেশী পিবিআই সদস্যদের ফাঁদে ধরা দেয় বিল্লাল নামে স্থানীয় এক তরুণ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিল্লাল হেলালকে হত্যা ও লাশ গুমের তথ্য দেয়ার পর শুরু হয় লাশ উদ্ধারের তৎপরতা।
চট্টগ্রাম অঞ্চল পি বি আই তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আবু হানিফ বলেন, আমরা প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এবং ছদ্মবেশ ধারণ করে তাকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছি। এ অঞ্চলটি দুর্গম হওয়ায় এ চক্রটি খুব সহজে এ ঘটনাটি ঘটাতে পারে।
জানাগেছে, গতকাল রাতে আটক বিল্লালের মাধ্যমে লাশ গুমের স্থান চিহ্নিত হলেও উদ্ধার প্রক্রিয়ার শুরুতেই বিঘ্ন ঘটায় একটি বিষধর সাপ। গভীর গর্ত থেকে লাশ তুলে আনার জন্য পিবিআই সদস্যরা নিচে নামতে যাচ্ছিলো তখন তাদের বিষধর সাপটি চোখে পড়ে। পরবর্তীতে গর্তের ভেতর আগুন ফেলে সাপটির মৃত্যু নিশ্চিতের পর আবারো লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু রাতে লাশ উদ্ধার সম্ভব না হওয়ায় আজ দুপুর থেকে ফের উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান পি বি আই পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান।
ফটিকছড়ি বাগানবাজার ইউপি সদস্য আতিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, এটি খুবই দুর্গম এলাকা। এখানে জনবসতি নেই। এখানে উদ্ধার কাজ চালানো খুবই কঠিন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী রামগড়-বাগানবাজার এবং হেঁয়াকোর গহীন জঙ্গলে বিপুল পরিমাণ তক্ষকের বাস রয়েছে। এর কোনো আর্থিক মূল্য না থাকলেও বিভিন্ন গুজব রটিয়ে একটি চক্র সাধারণ মানুষকে এখানে এনে জিম্মি করে রাখতো। যাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ পাওয়া যেত না তাদের হত্যা করে জঙ্গলে লাশ গুম করা হতো।
এদিকে অপহরণের বিষয়ে অপহৃত হেলল উদ্দিনের বন্ধু এনায়েত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ঢাকার বাসাবোর উত্তর মুগদাপাড়ার বাসিন্দা ঠিকাদার বাবুল সিকদার ও এনজিও কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন গত বছরের ২০ নভেম্বর ভুজপুরের হেঁয়াকো বাজারে একটি বোর্ডিং এ উঠেন। তারা দুজন খাগড়াছড়ি বেড়ানো জন্য শেষে ওখানে যান। ২২ নভেম্বরহেঁয়াকো বাজার থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা দুটি মোটরসাইকেলে করে দুজনকে দুই স্থানে নিয়ে যায়। ঐদিন অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে অপহৃতদের পরিবারের কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ফোন পেয়ে হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী ঝর্ণা ও বন্ধু এনায়েত পরদিন অর্থাৎ ২৩ নভেম্বর ভোর বেলায় হেঁয়াকো এসে পৌঁছেন। তারা অপহরণকারীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর জন্য ৪টি বিকাশ নম্বর দেয়া হয়। টাকার পরিমান নিয়ে দরকষাকষির এক পর্যায়ে অপহরণকারীরা ফোনের সুইচ বন্ধ করে রাখে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর অপহৃত হেলালের স্ত্রী ও তার বন্ধু ভুজপুর থানায় গিয়ে পুলিশকে ঘটনাটি জানান।
এনায়েত হোসেন বলেন, থানায় তিনি একটি লিখিত অভিযোগপত্র দেন। ঐদিন রাতে অপহরণকারীরা বাবুল সিকদারকে ছেড়ে দিলেও হেলালকে তারা মুক্তি দেয়নি।